‘গার্মেন্টস শিল্পের মতো পাটপণ্যেও প্রণোদনা অপরিহার্য’
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০১
ঢাকা: পাটজাত পণ্য আমদানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সুযোগ সামনে এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গার্মেন্টস শিল্পকে আমরা যতটা প্রণোদনা দিয়ে থাকি, এই পাট একটা কৃষি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও সেই সুযোগটা কিন্তু পাচ্ছে না। সেই সুযোগটা দেওয়া একান্তভাবে অপরিহার্য বলে মনে করি। সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি।’
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন জেলায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২৩ উদযাপনে এই আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
পাটজাত পণ্য আমদানি করে একসময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো সেই সুযোগটা আরও সামনের দিকে এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ এখন পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন। পাট একটা পরিবশবান্ধব পণ্য এবং এই পাট থেকে বহু ধরনের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের গবেষকরা এব্যাপারে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন পণ্য তারা আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কাজেই পাটকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে এসময় পাটের শাড়ি না হলে কিন্তু বিয়ে হত না। বিয়ের সময় কনেদের জন্য পাটের শাড়ি দেওয়া হত। এটা একসময় কিন্তু প্রচলিত ছিল। কাজেই আমরা আশা করি আমাদের সেই দিনটা আবার ফিরে আসবে।’
বস্ত্রখাতে পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমার অনুরোধে বেসরকারি খাতে ফ্যাশন ডিজাইন প্রযুক্তি ইউনিভার্সিটিও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কারণ আসলে ফ্যাশন ডিজিটাইনটা একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোন কোন সময়ে কোন রঙ ব্যবহার হবে, কোন ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটার চাহিদা বেশি। এটা কিন্তু একটা ঘূর্ণায়মান অবস্থা। এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। তাই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
গার্মেন্টেস সংশ্লিষ্টসহ রফতানিকারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ব্যবহার হয়ে থাকে। সেভাবে আমরা আরও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালে ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশের রফতানি বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বিনা দ্বিধায় এ আশ্বাস আপনাদের দিতে পারি যে, আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতির প্যাটার্ন খুব শিগগিরই পাল্টে যাবে এবং জিনিসপত্রের দামও কমানো সম্ভব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরাও সেটা বিশ্বাস করি। আমদানি নির্ভর থাকতে চাই না। রফতানি করে ‘বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী’, সেটাই আমরা আনতে চাই। এক্ষেত্রে আইসিটি বা ডিজিটাল ডিভাইসও রফতানি ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখছে। আমাদের পণ্যগুলো ভ্যালুয়েডেড করে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে আমাদের একদিকে দক্ষ জনশক্তি এবং ভ্যালুয়েডেড পণ্য আমাদের আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে।”
হারিয়ে যাওয়া মসলিনের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিও ধন্যবাদ এবং গবেষণার মাধ্যমে এটিকে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাটকে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু পাট পরিবেশবান্ধব। পাট থেকে তৈরি সোনালি ব্যাগ, যে ব্যাগে আপনি ময়লা-টয়লা ফেলে দিলে নিজে নিজেই মাটির সাথে মিশে যাবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত আর কিছু হতে পারে না। সেটাও আমরা সামনে উৎপাদন করতে চাই এবং যে আমাদের যে ইন্ড্রাস্টিগুলি বেসরিকারি খাতে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি। সেখানে পাট-চামড়া মিশ্রিত করে অনেক পণ্য উৎপাদন করা যায়। আর পাটের পণ্য আস্তে আস্তে এটার যত উৎকর্ষতা সাধন হবে, ততবেশি এটার বাজারজাত করা সহজ হবে। কারণ পরিবেশবান্ধব পরিবেশ হিসাবেই পাটের একটা সুদিন আসবে এবং পাটের সুতাটাও কাজে লাগবে। কাজেই সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শহীদউল্লাহ আজিম।
অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়।
পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের গড়ে তোলা ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- গোপালগঞ্জে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশালের গৌরনদীতে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, নওগাঁর মান্দায় শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ভোলায় ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট।
সারাবাংলা/এনআর/এমও