Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ বছরে ক্যানসার আক্রান্ত শিশু বেড়েছে পাঁচ গুণ!

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:০৪

ঢাকা: দেশে প্রতি বছর ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে শনাক্তের আওতার বাইরেও থাকছে অনেকেই। সচেতনতার অভাবে অনেক শিশুরই ক্যানসার রয়ে যাচ্ছে আড়ালে। বিনা চিকিৎসায় অনেক শিশুর মৃত্যুও হচ্ছে।

২০০৭ সালে প্রতি দুই থেকে তিন দিন পর একটি ক্যানসার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিতে আসত জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিনই গড়ে নতুন পাঁচটি ক্যানসার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। এই হিসাবে, দেশে গত ১০ বছরে ক্যানসার আক্রান্ত শিশু সংখ্যা বেড়েছে অন্তত পাঁচ গুণ। গত পাঁচ বছরের তথ্য বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই সময়ে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ১০ হাজার শিশুর শরীরে ক্যানসার শনাক্ত হলেও চিকিৎসা সুবিধা সে তুলনায় বাড়েনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে শিশুদের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার হার আরও বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিশু ক্যানসার আক্রান্তের হার ১৫ হাজার হওয়ার কথা। অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ হাজার রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে তারা চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর হার কমাতে প্রয়োজন সচেতনতা। বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতন করে তুলতে হবে, যেন তারা শিশুর মধ্যে ক্যানসারের উপসর্গ দেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। সঠিক সময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসার আওতায় আসলে শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসায় সুস্থ করে তোলা যায় দেশেই।

শিশুদের ক্যানসার কেন হয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জিনগত কারণে শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের উদাহরণ সাধারণত জাতিগতভাবে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়। এছাড়াও জেনেটিক্সের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিভেদে সংবেদনশীলতা ভিন্ন হওয়ার কারণেও এটি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, এপস্টেইন-বার নামে ভাইরাস ছাড়াও, হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যানসার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, শিশুদের ক্যানসারের বেশিরভাগ কারণই জেনেটিক বা বংশগত ত্রুটি। যখন মায়ের পেটে একটি ভ্রূণ তৈরি হয়, তখন কোনো সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যা থেকে যায় এবং সেখান থেকে ওই শিশুর ক্যানসার উৎপত্তি হয়। শিশুদের ৯৫ শতাংশ ক্যানসারই হয় জেনেটিক কারণ থেকে।

শিশু ক্যানসার বাড়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের দূষণকেও দায়ী করেছেন অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মতোই বাংলাদেশেও শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইলেকট্রনিকসামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। এসব কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। এসব দূষণ কমাতে না পারলে ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে।

তিনি জানান,  সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে বাংলাদেশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রোগী ভালো হয়। কিন্তু যারা দেরী করে চিকিৎসা নেন, তাদের রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এছাড়াও বাবা মায়ের কাজের পরিবেশসহ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়েট্রিক হেমাটোলাজি অ্যান্ড অনকোলজি (শিশু রক্তরোগ ও ক্যানসার) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান।

তিনি বলেন, বাবা কর্মক্ষেত্রে রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে শিশুদের ক্যানসার নিয়ে জম্মানর ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্তায় মা ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে শিশু গর্ভাবস্থাতেই আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া খাদ্য উৎপাদনে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, খাবারে ফরমালিনের ব্যবহারসহ নানা কারণে শিশুর ক্যানসার হতে পারে।

শিশুদের ক্যানসার কি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, শিশুদের বেশিরভাগ ক্যানসারেই তেমন কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। এতে তাদের শরীরে ক্যানসার দেরীতে শনাক্ত হয়।

উন্নত বিশ্বে যেহেতু শিশুরা বাবা-মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকে এবং চিকিৎসার সুযোগও বেশি, তাই তাদের প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করা সহজ। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তুলনামূলক স্বাস্থ্য সেবা এবং পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় প্রাথমিক অবস্থাতে ধরা পড়ে না।

লক্ষণ ও উপসর্গ কী?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান বলেন, ক্যানসারের আসলে আলাদা করে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। অন্যান্য রোগের মতোই সাধারণ উপসর্গ থাকে। তবে অন্যান্য রোগে যেমন চিকিৎসা করলে উপসর্গগুলো ভালো হয়ে যায়, ক্যানসারের ক্ষেত্রে সেটি হয় না। বরং উপসর্গগুলো থেকে যায় এবং ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকে।

উপসর্গগুলো হচ্ছে-

১. শরীরে ব্যথা

শরীরের কোথাও যদি অনেক দিন ধরে ব্যথা থাকে এবং সেটি না সারে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, যদি কোনো শিশু অনেক দিন ধরেই তার শরীরে ব্যথা করছে বলে জানায় তাহলে সেটি গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। হয়তো শিশু বলতে পারবে না কিন্তু বোঝাবে যে তার শরীরটা ভালো নেই, গায়ে ধরতে দিচ্ছে না, শরীরে খুব বেশি ব্যথা।

২. ফোলা বা ফোলা ভাব

শরীরের কোনো অংশ যদি হঠাৎ ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিনেও ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গলার ভেতরে কোনো গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া বা শরীরের কোথাও কোনো অংশ ফুলে যাওয়া, পেটের ভেতরে চাকার মতো অনুভূত হওয়া, শরীরের জয়েন্ট বা কোনো সংযোগস্থলে ফুলে যাওয়া ভালো লক্ষণ নয়। এ ধরনের উপসর্গ দীর্ঘদিন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৩. অনেক দিন ধরে জ্বর

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তেমন ভালোভাবে কাজ করতে পারে না বলে অনেক সময় জ্বর আসলেও সেটি আর ভালো হয় না। ফলে অনেক দিন ধরে জ্বরে ভুগতে থাকে রোগী। এটি রক্তের ক্যানসারের একটি লক্ষণ।

অনেক দিন ধরে জ্বরে ভুগলে পরীক্ষা করানো উচিত। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত, নাকি অন্য কোনো সমস্যা রয়েছে।

এছাড়া শরীর হঠাৎ করে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস হওয়ার পর অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে, ওষুধ খাওয়ার পরও জন্ডিস ভালো না হলে, শরীর হলুদ হয়ে গেলে শিশুকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

৪. দীর্ঘ সময় ধরে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা

শিশু যদি দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরানোর কথা জানায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৫. হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া

শিশু যদি খাবারের প্রতি অরুচি দেখায়, কোনো কিছুই খেতে চায় না এবং এই সমস্যা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তার পর এক পর্যায়ে হঠাৎ করে দেহের ওজন কমে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরীক্ষা করাতে হবে।

ডা. ফারজানা রহমান বলেন, অনেক সময় লক্ষণ ছাড়াও কিছু লোকানো ক্যানসার থাকে। সেক্ষেত্রে আলাদা কোনো লক্ষণ থাকে না, শুধু শিশু খাওয়াদাওয়া করে না, ওজন কমে যাচ্ছে, কান্নাকাটি করছে, খেলাধুলা বা অন্য কোনো কাজ করছে না— এরকম হলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে।

৬. ক্লান্তি ও স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম

কোনো কাজ না করেও যদি শিশু সারাক্ষণই ক্লান্তি বোধ করে, বিশ্রাম নেওয়ার পরও ক্লান্তিভাব না যায় এবং স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘামে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. হঠাৎ রক্তপাত

শরীরের কোনো অংশ থেকে যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে রক্তক্ষরণ শুরু হয় তাহলে অবশ্যই দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কোনো কারণ ছাড়াই বা কোনো আঘাত ও ব্যথা পাওয়া ছাড়াই রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাহলে ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বোন ম্যারো বা হাড়ের মজ্জা থেকে যে রক্ত তৈরি হয় সেটি যদি কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, বা রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান তৈরি না হয় তাহলে শরীরের কোনো একটি অংশ থেকে যেমন নাক, পায়খানার রাস্তা বা প্রস্রাবের সঙ্গে হঠাৎ করেই রক্তক্ষরণ হতে পারে।

রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না বলে এই উপসর্গ দেখা দেয় বলে জানান ডা. ফারহানা।

এছাড়া শরীরের চামড়ার ভেতরেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। তখন চামড়ায় কালো বা লাল লাল ছোপ দেখা যায়। এমন অবস্থায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশু বয়সে কোন ক্যানসার বেশি হয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের মাঝে সাধারণত লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসার বেশি হয়। ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত।

এছাড়া আরও যেসব ক্যানসার হয় সেগুলো হচ্ছে, লিম্ফোমাস এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের টিউমার। কিছু ক্যানসার রয়েছে যা শুধু শিশুদেরই হয়। যেমন নিউরোব্লাস্টোমা, নেফ্রোব্লাস্টোমা, মেডুলোব্লাস্টোমা, এবং রেটিনোব্লাস্টোমা। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্যানসার কিছুটা ভিন্ন।

স্তন ক্যানসার, ফুসফুস, কোলন বা মলদ্বারের ক্যানসার সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদেরই হয়ে থাকে। শিশুদের এ ধরনের ক্যানসার হওয়ার ঘটনা বিরল।

শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যানসার চিকিৎসা কি একই?

অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, শিশু ক্যানসার ও বড়দের ক্যানসার কিন্তু আলাদা। কিন্তু তবুও শিশুদের নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসকের কাছে যায় মানুষ। তাদের বাধ্য হয়েই যেতে হয়, কারণ শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যথেষ্ট নেই।

তিনি বলেন, বড়দের যেসব ক্যানসার হয় তা খুব কম মাত্রায় শিশুদের মাঝে দেখা যায়। আবার শিশুদের যে ক্যানসার হয় তা খুব কম মাত্রায় প্রাপ্তবয়ষ্কদেরর মাঝে দেখা যায়। বড়দের ক্ষেত্রে দেখা যায় ফুসফুসে ক্যানসার, মেয়েদের জরায়ু মুখের ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, খাদ্যনালী, মলদ্বার, শ্বাসনালী, গলায় ক্যানসার হয়ে থাকে। শিশুদের কিন্তু এগুলো তেমন একটা হয় না।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্লাড ক্যানসার, চোখের ক্যানসার বা রেটিনাব্লাস্টোমা, কিডনির ক্যানসার বা নেফ্রোব্লাস্টোমা, লিভারের ক্যানসার বা হেপাটোব্লাস্টোমা, ব্রেনের ক্যানসার, গ্রন্থির ক্যানসার, লিম্ফোমা টাইপের ক্যানসার। এসব ক্যানসার আবার বড়দের হয় না। অর্থাৎ, বড় ও শিশুদের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ধরনই আলাদা।

তিনি বলেন, হাড়ের ক্যানসার বড়দেরও হয় আবার শিশুদেরও হয়। কিন্তু দু’টির প্রটোকল আলাদা। এক্ষেত্রে বলা যায়, শিশু ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আসলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া সম্ভব নয়। এই শিশুদের যদি অন্যরা দেখে তবে বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা বেশি। কারণ প্রতিটা রোগের আলাদা প্রটোকল রয়েছে। শিশুদের ক্যানসার রোগের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থাও আলাদা।

বর্তমান পরিস্থিতি কী?

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, আমরা বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী পাচ্ছি তা পাঁচ বছর আগের তুলনায় বিবেচনা করলে দ্বিগুণ হয়েছে। দশ বছর আগের তুলনায় প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি রোগী বর্তমানে পাচ্ছি। প্রতি বছর সারা দেশে ৮ থেকে ১০ হাজার নতুন রোগী পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে নতুন রোগী দেখেছি নয়শোর কিছু বেশি। নতুন ও পুরাতন রোগী মিলিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি সাড়ে ১২ হাজার রোগী। নতুন রোগী কোনো বছরে গড়ে ১ হাজার, কোনো বছর ১১শ’ কোনো বছর ১২শ’—এরকমই আসছে। সে হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশে শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে দুই-তিন দিন পর একটি নতুন আক্রান্ত শিশু রোগী আসত। আর এখন প্রতিদিনই তিন থেকে চারটি নতুন রোগী আসে। গড়ে পাঁচটি নতুন আক্রান্ত শিশু ক্যানসার রোগী পাই। প্রতিমাসে ৯০ থেকে ১০০’র কাছাকাছি শিশু ক্যানসার রোগী পাচ্ছি।

ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের দেশে রোগী পাওয়ার হার আসলে আরও বেশি হওয়ার কথা। সারা বিশ্বে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর হারের সঙ্গে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে তুলনা করলে সংখ্যাটা আরও বেশি হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিশু ক্যানসার আক্রান্তের হারটা ১৫ হাজার হওয়ার কথা। আমাদের চার থেকে পাঁচ হাজার শিশু ক্যানসার রোগী শনাক্তের বাইরে থাকছে।

চিকিৎসায় ক্যানসার ভালো হয়

ডা. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির সারাবাংলাকে বলেন, শিশুদের ক্যানসার বড়দের ক্যানসারের মতো নয়, এটি সম্পূর্ণ আলাদা। বড়দের জরায়ু, স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার বেশি হলেও শিশুদের বেশি হয় ব্লাড ক্যানসার। ক্যানসারে আক্রান্ত ১০০ শিশুর মধ্যে ৩০টির ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শিশু ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। বাকি ৭০ শিশুর মধ্যে ১৫টি ব্রেন টিউমার এবং ১৫টি গ্রন্থির ক্যানসারে আক্রান্ত। আর ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে চোখ, কিডনি, হাড়, মাংসপেশি, জনন কোষ ও লিভারে ক্যানসার হতে পারে।

তিনি বলেন, এসব ক্যানসারের বেশিরভাগই প্রাথমিকপর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে অনেক অভিভাবকের মধ্যে ভুল ধারণা থাকায় ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা না নিয়ে সন্তান নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান। এমনকি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ৩০ শতাংশ রোগীও ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় ভালো হয়।

সরকারি পর্যায়ে শিশু ক্যানসার রোগের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ

অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর সারাবাংলাকে বলেন, দেশে শিশুদের ক্যানসারের চিকিৎসা আছে। কিন্তু রোগীর তুলনায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা কম। বিছানা কম, চিকিৎসক কম। অথচ রোগী বাড়ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বড় বড় মেডিকেল কলেজগুলোতে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করতে হবে। ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

আজ বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস

১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিনভর নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

সারাবাংলা/এসবি/আইই

ক্যানসার আক্রান্ত শিশু বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস শিশুদের ক্যানসার