Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিকেলের চেম্বারে সেবার মান ভালো হলে চিকিৎসকের মিলবে পদোন্নতি

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২০

ঢাকা: চূড়ান্ত করা হয়েছে সরকারি হাসপাতালে অফিস সময়ের পর বিকেলের শিফটে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য চালু হতে যাওয়া বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা। নীতিমালা অনুযায়ী সকালের শিফট শেষে বিকেলে রোগীরা নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে নিতে পারবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু হতে যাওয়া এই বৈকালিক চেম্বারে চিকিৎসকের সেবার মান ভাল হলে মিলবে পদোন্নতি। এমনকি এই বিশেষায়িত সেবা ব্যবস্থার চিকিৎসাসেবা দিলে তা চিকিৎসকের উচ্চশিক্ষার জন্যও সহায়ক হবে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, পহেলা মার্চ থেকেই জেলা-উপজেলার ৭৪টি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে এই সেবা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ২০টি জেলা, ৫০ উপজেলা ও চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষামূলক সেবা শুরু হবে এক মার্চ। এতে থাকবে উচ্চতর ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বার, অস্ত্রোপচার, রোগ নির্ণয়সহ ৪ ধরনের সেবা। এই সেবা মিলবে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়াই নয়, বিকেলের এই বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসকদের সেবার মান ভালো হলে থাকছে বিশেষ পুরষ্কারের ব্যবস্থাও। এক্ষেত্রে তার ভূমিকার ওপর নির্ভর করে হতে পারে পরবর্তী পদোন্নতি এবং উচ্চশিক্ষার জন্য বিবেচনা করা হবে। যার জন্য আলাদা গাইডলাইন প্রস্তুত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।

নীতিমালা অনুযায়ী, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক সপ্তাহে দু’দিন করে নিজের রোগী দেখবেন। এক্ষেত্রে টিকিট নেওয়া যাবে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফি ৩০০ টাকা। এই টাকায় এক মাসের মধ্যে ফলো-আপ হিসেবে আরও একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যাবে। আর ১৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় করা যাবে যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচার।

নীতিমালা অনুযায়ী, চিকিৎসকদের বৈকালিক শিফটে দায়িত্ব পালন করে পাওয়া পরামর্শ ফি’র ৩০০ টাকার মধ্যে চিকিৎসক পাবেন ১০০ টাকা। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগ ১০০ এবং ১০০ টাকা জমা হবে সরকারি কোষাগারে। আর অস্ত্রোপচারের ফি থেকে অর্ধেক পাবেন চিকিৎসক। এসব অর্থ তারা দুই মাস পর হাতে পাবেন। এছাড়া টিকেট কেনার তারিখ হতে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে মোট দু’বার চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

বিকেলের এই স্পেশালিস্ট সার্ভিসে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলে বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারেও উল্লেখ করা হয় নীতিমালায়।

নীতিমালা অনুযায়ী, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বা পরিচালকরা রোগী দেখার জন্য রোস্টার চালু করবে। প্রাথমিকভাবে প্রতি বিভাগ থেকে একজন করে চিকিৎসক নিয়ে এই রোস্টার চালু করতে পারেন তারা। এতে জাতীয় পর্যায়ের খ্যাতনামা চিকিৎসকরা অবসরের পরও বিকেলের শিফটে চালু হতে যাওয়া এই কর্মসূচিতে আর্থিক সুবিধাসহ সংযুক্ত হতে পারবেন।

বিকেলের শিফটে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য রোগীদের দুপুর ২:৩০ মিনিট থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকেট দেওয়া যাবে। এই শিফটের রোস্টার অনুযায়ী কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে সেক্ষেত্রে আলোচনাক্রমে বিকল্প চিকিৎসক রোস্টারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তবে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ছাড়া বৈকালিক স্পেশালিষ্ট কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারের ভাবনা সরকারের ভালো উদ্যোগ। তবে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। রাজধানীর বাইরে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানের পদ খালি। এ দেশে প্রচুর মানুষ, প্রচুর রোগী। হাসপাতালগুলোতে বারান্দায় রোগী রাখতে হয়। অবকাঠামো ঠিক না করে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে পুরো চিকিৎসাসেবা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ, বারডেম, হার্ট ফাউন্ডেশনে এ ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে সক্ষমতা আছে। অন্যান্য হাসপাতালে নিয়মিত রোগী ও তার স্বজনদের বসার জায়গা নেই। প্রস্রাব-পায়খানা করার ব্যবস্থা নেই। নতুন করে অবকাঠামো ও প্যাথলজি সুবিধা এবং লোকবল না বাড়িয়ে এ ধরনের উদ্যোগে লাভ হবে না।’

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটা চিকিৎসকদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। না করতে চাইলে করবেন না। সপ্তাহে এক দিন চিকিৎসকরা সময় দেবেন। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দেবেন। নিয়ম হলে কেন করবেন না। নীতিমালা করা হচ্ছে। রোগীরা বিশেষায়িত চিকিৎসা পাবে।’

বিএসএমএমইউকে পাইলট হিসেবে ধরার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিএসএমএমইউতে চিকিৎসকরা যেভাবে রোগী দেখেন, সেভাবেই প্রস্তাব দেওয়া হবে। যে হাসপাতালে রোগী দেখবেন, সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।’

আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালে বিকেলেও রোগী দেখবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

সারাবাংলা/এসবি/এমও

চিকিৎসক পদোন্নতি বিকেলের চেম্বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা সরকারি হাসপাতাল সেবার মান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর