কয়লা কেনার চুক্তি পর্যালোচনা করতে কমিটি গঠন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:০৬
ঢাকা: বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানিতে সরকারি-বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সই হওয়া চুক্তিগুলো বিশ্লেষণে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে সরকার। বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠন করা কমিটি কয়লা সরবরাহ চুক্তি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, গত মাসের শেষ সপ্তাহে এই কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়ায় কয়লা ক্রয়ে যে অসম ডিমান্ড মূল্য পাঠিয়েছে তারই প্রেক্ষাপটে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, কয়লাভিত্তিক ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপিডিবি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে। ২৫ বছর মেয়াদী ওই চুক্তিতে জ্বালানির আমদানি ও পরিবহন খরচ ক্রেতা দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ বহন করবে বলে উল্লেখ রয়েছে। আর তার ক্রয়মূল্য ধরা হবে ওই সময়ের বাজার দর অনুযায়ী। কিন্তু সম্প্রতি আদানি পাওয়ার বিপিডিবি বরাবর ডিমান্ড নোট ইস্যুর জন্য যে অনুরোধ পাঠিয়েছে, সেখানে কয়লার দাম প্রতি মেট্রিকটন চারশ মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। যা বর্তমান আন্তজার্তিক বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন কয়লার দাম ২৫০ মার্কিন ডলার। আদানির নির্ধারণ করা দামে কয়লা কিনলে ভারত থেকে আনা বিদ্যুতের ব্যয়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ খরচ বেশি পড়বে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পায়রা প্ল্যান্টের জন্য প্রতি মেট্রিক টন কয়লা কেনা হচ্ছে ২৫০ মার্কিন ডলারে। যা আদানির ডিমান্ড নোটের চেয়ে ৪৫ শতাংশ মূল্য কম। তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করছে এটি বর্তমান আন্তজার্তিক বাজারের মূল্য অনুযায়ী হওয়া উচিত। শুধু আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তিই পর্যালোচনার জন্য নয় অন্যান্য যেসব চুক্তি রয়েছে তা বিশ্লেষণ করবে গঠিত কমিটি।
এদিকে, উচ্চ দরের বিষয়টি সামনে আসায় কয়লার দাম পূর্নবিবেচনার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী ( বিদ্যুৎ উৎপাদন), বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সচিব (উন্নয়ন)সহ মোট নয় সদস্যের কমিটির নেতৃত্ব দেবেন বিদ্যুৎ সচিব। সূত্রে জানা গেছে, এই কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার জন্য আইপিপিগুলোর সঙ্গে কয়লা সরবরাহ চুক্তি ও বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তির মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে।
উল্লেখ্য, ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অসম, অসচ্ছ ও বৈষম্যমূলক চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত ভারতের বিতর্কিত কোম্পানি আদানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে। জাতীয় স্বার্থে বিশেষ করে এই চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগনকে বইতে হবে বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করে চুক্তি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম