সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠছে শহিদ মিনার
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:৩৩
ঢাকা: নানান শ্রেণি-পেশা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় সিক্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। ফুলে ফুলে ভরে উঠছে বেদি। হাজারো জনতার ঢল নেমেছে সেখানে। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২ টার পর থেকেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এদিন একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এখন সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধায় সিক্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে এখন শ্রদ্ধা নিবেদন চলছে।
মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১মিনিটে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির পর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর তারা সশরীরে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি। এবার তারা সশরীরে শ্রদ্ধা জানালেন।
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহিদ মিনারে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। পরে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকারের পর ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পর শহিদ মিনারে বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তার পরে সংসদের চিফ হুইপ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। দেশের সূর্য-সন্তান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারাও শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, নানা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে শহিদ মিনারে। শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এ সময় ভেসে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতি পারি’।
শহিদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে এখন পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ছাত্রলীগ, জাসদ, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, ন্যাশনাল আওয়মী লীগ ন্যাপ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফাউন্ডেশন, যুব ইউনিয়ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও ঢাবির শিক্ষক সমিতি। এছাড়া ঢাবির প্রায় সব হলের পক্ষ থেকেই শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, মাস্টার দা সূর্য সেন হল, জগন্নাথ হল, সুলিমুল্লাহ হল, বিজয় একাত্তর হল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি ক্লাবের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, রুপালী ব্যাংক লিমিটেড, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্রপরিষদ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী লীগ, জাগ্রত বাংলাদেশ, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশন, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ভাষা শহিদ আবদুল জব্বারের পরিবারবর্গ, একুশে টেলিভিশন, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা গেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এদিকে, শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এর আগে, সোমবার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। রাত ১১ টা ৫৬ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ শহীদ মিনারে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। পরে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতির পর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম