অর্থের অভাবে থেমে আছে দেশের ‘প্রথম’ শহীদ মিনারের নবনির্মাণ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৬
রাজশাহী: ১৯৫২ সালে রাজশাহী কলেজে নির্মিত শহীদ মিনার নতুন করে গড়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত পাঁচ বছরে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে শুধু পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে নামফলক ছাড়া ওই শহীদ মিনারের কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা অর্থের অভাবে কাজে হাত দিতে পারছে না। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের দাবি, তারা অর্থ সংকটের বিষয়টি জানেন না।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী কলেজে মুসলিম ছাত্রাবাসের পাশে কয়েক ঘণ্টার জন্য নির্মিত হয় ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। রাজশাহীর ভাষাসৈনিকদের দাবি, এটি দেশের প্রথম শহীদ মিনার। যদিও তাদের দাবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখনও মেলেনি।
ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক ও বরকতসহ কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর রাজশাহীতে পৌঁছে। তখন আন্দোলনরত ছাত্ররা রাতেই রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেল এলাকায় শহীদ মিনার তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, “আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্থান থেকে ইট সংগ্রহ করেন। রাতে সিমেন্ট সংগ্রহ করতে না পারায় ইট ও কাদামাটি দিয়ে তারা শহীদ মিনার নির্মাণ করে নাম দেয় ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে লেখা হয়, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ এ কাজে কলেজের কয়েকজন কর্মচারীও সহায়তা করেন। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শেষে ছাত্ররা তার ছবিও তুলে রাখে। তবে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সেটি ভেঙে দেয়।”
ভাষাসৈনিকদের দাবির প্রেক্ষিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের জায়গাটি শনাক্ত করার উদ্যোগ নেন। পরে সেখানে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ‘শ্রদ্ধাস্মারক’ নামে একটি ফলক নির্মাণ করে। ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সেটি উন্মোচন করেন মেয়র লিটন। এর কয়েক বছর পর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের স্থানে পূর্ণাঙ্গরূপে শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী নকশাও চূড়ান্ত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচন করেন খায়রুজ্জামান লিটন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ‘সাবেরা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণের কাজটি পায়। এ জন্য ৪৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দও হয়। ২০২০ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পাইলিংয়েই প্রায় ৩৫ লাখ টাকার খরচ দেখিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই বিল এখনও পরিশোধ করা হয়নি।
শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সময় রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন মোহাম্মদ হবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নতুন এ শহীদ মিনারের জন্য আমি জায়গা ছেড়ে ছাত্রবাসের রাস্তা করেছিলাম। শহীদ মিনারের দৃশ্যটা যেন সুন্দর হয়, এক নজরে সবার চোখে পড়ে, সে জন্য পাশের ডাইনিংটাও অন্যত্র সরিয়ে নিলাম। কিন্তু কাজ যতটুকু হয়েছে, তা মাটির নিচেই। কাজ কেন শেষ হলো না তা জানা নেই।’
সাবেরা এন্টারপ্রাইজের মালিক জুলফিকার হায়দার সুজন বলেন, ‘মাটির নিচে ২২টি পাইলিং করা হয়েছে। পাইলিং করার পর সিটি করপোরেশনে ৩৫ লাখ টাকার বিল দাখিল করা হয়েছিল। সেই বিল পুরোপুরি পরিশোধ করেনি সিটি করপোরেশন। এখনও ১০ লাখ টাকা পাওনা। তাই বাকি কাজে হাত দিতে পারিনি।’
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেক বলেন, ‘কাজটি সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে হচ্ছিল, তারাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘শহীদ মিনার নির্মাণকাজের আপাতত কোনো অগ্রগতি নেই। এ প্রকল্পে কী ঘটেছে, তা তৎকালীন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লাখ টাকা এনে দিয়েছিলাম প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু কাজটি কেন হলো না, তা আর জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি। অর্থ সংকটের কথাও আমার জানা নেই।’
আমতলা থেকে ইউনেস্কোর আরও খবর:
‘ভাষা আন্দোলন থেকেই বাংলাদেশ, বাংলার স্বাধীনতা’
ভাষার মাস শুরু
‘২০০ টাকার লোভে জামায়াতে যোগ দেয় গোলাম আযম’
ভাষা আন্দোলনে বামপন্থীরা ছিল মুখ্য ভূমিকায়
অতঃপর কবি এসে মেলার উদ্যান অংশে দাঁড়ালেন
একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতার নামে চসিকের লাইব্রেরি
কিভাবে তৈরি হয়েছিল একুশের সেই অমর গান?
বছরজুড়ে ১৫০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য
‘বাপ-মা নেই’ দেশের কোনো শহীদ মিনারেরই
অযত্ন-অবহেলায় শহীদ বরকত স্মৃতি জাদুঘর
যে বিদ্যালয়ে ‘প্রথম দাঁড়িয়েছিল’ শহিদ মিনার
সারাবাংলা/এমও