ধর্ষণ মামলায় সাবেক এমপি আরজু কারাগারে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:২৬
ঢাকা: পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে ধর্ষণের অভিযোগ মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আরজু। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৬ জানুযারি একই আদালত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
২০২২ সালে ২২ এপ্রিল আদালতে শিক্ষানবীশ এক আইনজীবী (৪৯) ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দির পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দেন। তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মাদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগ সত্য মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদন সোমবার ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। মামলায় আসামির পরিচয়ে সাবেক এমপি উল্লেখ না থাকলেও বাদী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তার আত্মীয়-স্বজনরা ফের তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর মাধ্যমে আসামির সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে আসামি নিয়মিত ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নিজের প্রতি তাকে আকৃষ্টের চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে সফল হয়। আসামি ওই নারীকে জানায় যে, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। এই তথ্য পেয়ে বাদী সামাজিক নির্ভরতা ও একাকীত্বের অবসানের জন্য তাকে ভালোবেসে ফেলে এবং বিয়ের জন্য মত দেয়।
২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামি তার পরিচিত কাজী নিয়ে ওই নারীর বড় মগবাজারের ভাড়া বাসায় উপস্থিত হন। সেখানে বাদীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। এর পর আসামি বাদীর সঙ্গে মগবাজারের ভাড়া বাসায় এবং পরে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদী হাউজিং সোসাইটির ভাড়া বাসায় দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এক পর্যায়ে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।
এর আগে, সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্নভাবে বাচ্চা নষ্টের চেষ্টা করেন। এমনকি সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তার আচরনে পরিবর্তন আসে। ওই নারীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন তিনি। এদিকে তার স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নেয় আসামি। এমনকি ওই নারী তার ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেও টাকা দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসামি ওই নারীর নামে কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেয়নি, এমনকি টাকাও ফেরত দেয়নি।
এক পর্যায়ে আসামি ওই নারীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। পরে বাদী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আসামির প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। সেই ঘরে কন্যা সন্তান আছে। এমনকি ওই ব্যক্তি পরিচয়ের সময় বাদীর কাছে নিজের নাম ফারুক হোসেন বলে প্রচার করে। কিন্তু তার প্রকৃত নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু।
অভিযোগে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে বাদীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্যই বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন ওই ব্যক্তি। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ওই নারীকে হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর সঙ্গে বিবাহ ও কন্যার পিতৃ পরিচয়কেই অস্বীকার করে। তবে মামলার তদন্তের সময় ওই কন্যা সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে সন্তানটি ওই নারীর গর্ভজাত এবং আসামি আজিজুল হক আরজু তার জৈবিক পিতা বলে প্রমাণ হয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/ইআ