স্বাভাবিক প্রসবে ৩৩% মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারে অ্যাজিথ্রোমাইসিন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:২৯
ঢাকা: স্বাভাবিক প্রসবের সময় অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের দুই গ্রাম ওরাল ডোজ গ্রহণ করলে মায়েদের সেপসিস বা মৃত্যু ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর এক গবেষেণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফর উইমেনস অ্যান্ড চিলড্রেনস হেলথ রিসার্চ এর আওতায় ‘প্রসবের সময় অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রফিল্যাক্সিস ব্যবহার (এ-প্লাস)’ শীর্ষক বহুদেশীয় এ গবেষণা পরিচালনা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণাটি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যোনিপথে প্রসবের (যা স্বাভাবিক প্রসব নামেও পরিচিত) সময় অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের ২ গ্রাম ওরাল ডোজ গ্রহণ করলে মায়েদের সেপসিস বা মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ কমে যায়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এ-প্লাস গবেষণাটি সাতটি দেশের ২৯ হাজার ২৭৮ জন গর্ভবতী নারীর ওপর করা হয়। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, কঙ্গো, গুয়াতেমালা, ভারত, কেনিয়া, পাকিস্তান এবং জাম্বিয়া। ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত এসব গর্ভবতী নারীর দুটি ভাগে বিভক্ত করে একটি গ্রুপকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও অন্য গ্রুপটিকে প্লাসিবো (মূল ওষুধের মতই দেখতে, কিন্তু এতে স্টাডি ড্রামের উপাদান থাকে না) দেওয়া হয়। প্লাসিবো গ্রুপের তুলনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপে মাতৃকালীন সেপসিস বা মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ কম দেখা যায়।
গবেষণায় বলা হয়, ফলাফলের এ পার্থক্য মূলত অন্য গ্রুপের তুলনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপে সেপসিস কম হওয়ার কারণে হয়েছে। এছাড়াও অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে এন্ডোমেট্রাইটিস (গর্ভের আস্তরণের সংক্রমণ), ক্ষত থেকে রোগ সংক্রমণ এবং প্রস্রাবের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম দেখা যায়। অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারী নারীরা প্লাসিবো গ্রুপের তুলনায় প্রসবপরবর্তী জটিলতা থেকে হাসপাতালে কম ভর্তি হয়েছেন এবং পাশাপাশি ডাক্তারের কাছেও অনির্ধারিত সময়ে কম দেখা করেছেন।
জানা গেছে, সেপসিস তখনই হয় যখন শরীর কোনো একটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। এর ফলে মানবদেহের এক বা একাধিক অঙ্গ অকেজো হয় যেতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে অ্যান্ডোমেট্রাইটিস (গর্ভের আস্তরণের সংক্রমণ), ক্ষত থেকে রোগ সংক্রমণ এবং প্রস্রাবের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম দেখা যায়। প্রসব পরবর্তী জটিলতা থেকে হাসপাতালে কম ভর্তি হয়েছেন।
তবে গবেষণায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন নবজাতকের সেপসিস বা মৃত্যুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে কিনা তা জানা যায়নি। উল্লেখ্য সিজারিয়ান ডেলিভারিতে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগে থেকেই অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যবহার করা হচ্ছে।
গবেষণার বাংলাদেশ সাইটের সহ-নেতৃত্বে ছিলেন ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ড. রাশিদুল হক, আইসিডিডিআর,বির সহযোগী বিজ্ঞানী এসকে মাসুম বিল্লাহ ও আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. উইলিয়াম পেট্রি।
গবেষণার প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. রাশিদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে যেখানে প্রায় প্রতি তিনটি প্রসবের মধ্যে দুটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়, সেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রসবের সময় দেওয়া দুই গ্রাম অ্যাজিথ্রোমাইসিনের একক ডোজ অনেকের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, স্বাস্থ্যসেবাদানকারী এবং নীতিনির্ধারকরা স্বাভাবিক প্রসবের সময় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করবেন।
এনআইএইচ-এর ইউনিস কেনেডি শ্রীভার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও গবেষণাটির প্রাথমিক অনুদান প্রদানকারী ডায়ানা ডব্লিউ বিয়াঙ্কি, এম ডি বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে একটি নিরাপদ, কার্যকর এবং সাশ্রয়ী চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক মাতৃত্বকালীন সেপসিস এবং মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের জরুরিভাবে কার্যকর কৌশল নির্ণয় করা প্রয়োজন, কেননা এটি বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃত্যুর প্রায় ১০ শতাংশের জন্য দায়ী।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অ্যাজিথ্রোমাইসিন সেবনের ফলে কোনো বর্ধিত ঝুঁকির আশঙ্কা নেই। গবেষকরা আশা করেন, এর ফলাফল মাতৃত্বকালীন সেপসিস এবং মৃত্যু প্রতিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
মাল্টি-সাইট অধ্যয়নটি এনআইসিএইচডি’র গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফর উইমেনস অ্যান্ড চিলড্রেনস হেলথ রিসার্চ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং গবেষণায় সহ-অর্থায়ন করে এনআইসিএইচডি ও এফএনআইএইচ। এফএনআইএইচ, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে এ গবেষণার জন্য অনুদান পায়।
সারাবাংলা/এসবি/একে