Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইবি ছাত্রী নির্যাতন: চরম অবহেলা প্রভোস্টের, প্রক্টর ছিলেন উদাসীন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩১

ঢাকা: কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে আগামীকাল আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট, হাউস টিউটরদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং প্রক্টরের উদাসীনতার চিত্র উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

পরে আইনজীবী গাজী মো. মহসিন সাংবাদিকদের বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই দুটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে লিখিত স্টেটমেন্ট ও অডিও ক্লিপও জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত অন্তরা, তাবাসসুম, লিমা, মীম, উর্মি ও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে লিমার নাম শুধু জুডিশিয়ারি তদন্তে এসেছে। আর বাকি পাঁচজনের নাম দু’টি তদন্তেই এসেছে।’

আইনজীবী মহসিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেদের অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও জুডিশিয়াল তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হলের প্রভোস্ট, হাউজ টিউটোরদের দায়িত্বে চরম অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হয়েছেন। হলের প্রভোস্টের সামনে এই ঘটনা ঘটার পরও তিনি নিশ্চুপ ছিলেনই না বরং তিনি অভিযুক্তদের সহযোগিতাও করেছেন। তিনি ভিকটিমকে কোনো সহযোগিতা করেননি। জুডিশিয়ারি রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উদাসীনতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি ছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি।’

আদালত তদন্ত রিপোর্ট বিস্তারিত দেখে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে আগামীকাল আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। আর এ জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি আজকের মধ্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, এ ঘটনায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে (ভিসি) এ বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়। উক্ত কমিটিতে একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে রাখতে বলা হয় এবং তাদের সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ভিসির প্রতি নির্দেশ দেন।


গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।

পরে বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এর আগে, এ ঘটনায় গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। আদালত শুনানি নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

আদালতে উপস্থাপন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে র‌্যাগিং ও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যাক্কারজনক ও জঘন্য ঘটনার সঙ্গে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জড়িত ছিলেন।

এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন হুমকি দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

আর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তরা প্রত্যেককে নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করে। এছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থাতেই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, মোয়াবিয়ারাসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করে। একপর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবরে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।

তদন্তে প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মোমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও বলা হয়।

আরও পড়ুন:
ইবিতে ঘটনার পর উধাও হয়ে যায় সিসিটিভি ফুটেজ
রাতে পিএস’কে অব্যাহতি, সকালে বাংলো ত্যাগ ইবি উপাচার্যের
ইবিতে র‍্যাগিং: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রী হল থেকে বহিষ্কার

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও

ইবি ছাত্রী নির্যাতন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চরম অবহেলা প্রক্টর প্রভোস্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর