Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হিরো’ সাজতে কিশোর গ্যাংয়ে, ৬ এসএসসি পরীক্ষার্থী ধরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:০০

চট্টগ্রাম ব্যুরো : কিশোর অপরাধী চক্র বা কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানিয়েছে, কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়ে চকবাজার-জামালখান এলাকায় বিভিন্ন আড্ডায় যোগ দিয়ে তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এরপর নিজেরাই ‘ডট গ্যাং’ বা ‘ডট সুপ্রিমেসি’ নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। ফেসবুকে প্রকাশ্যে অপরাধ কর্মের বিবরণ শেয়ার করে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করে তাদের ‘গ্যাং লিডার’।

ছাত্রলীগ নেতা নামধারী কয়েকজন ‘বড় ভাই’ এই কিশোর অপরাধী চক্রের মূল মদদদাতা বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর চকবাজারে বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে সাত কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সদর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ছয় ছাত্রের সবাই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাসিরাবাদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ জন করে ছাত্র আছে।

চক্রের নেতৃত্ব দেওয়া ‘গ্যাং লিডার’ আগে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। নগরীর চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে পড়ালেখা ছেড়ে চলে যায় কক্সবাজারের চকরিয়ার বদরখালীতে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। তার বাবা একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক।

গ্রেফতার বাকি ছয়জনের মধ্যে পদ্মা অয়েলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিইপিজেডের একটি কারখানার ব্যবস্থাপক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, প্রবাসী, মুদি দোকানি এবং অটোরিকশা চালকের সন্তান আছে।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সম্প্রতি র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নগরীতে ৫০টিরও বেশি কিশোর অপরাধী চক্র শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ডট গ্যাং-কে ফেসবুকে নজরদারির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। এই চক্রটি মূলত দেড় বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে তারা ‘ছুরি আকিবের’ গ্রুপ নামে একটি চক্রের সঙ্গে ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে ডট গ্যাং সৃষ্টি হয়, যা ডট সুপ্রিমেসি নামেও ফেসবুকে পরিচিত।

ডট গ্যাংয়ে ৪০ জনেরও বেশি সদস্য থাকলেও সক্রিয় ৮-৯ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে র‌্যাব, যাদের মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রায়ই দেখা যায়। গত দেড় বছরে এই চক্রের সদস্যরা চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত এলাকায় ১২-১৪টি মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের হাতে ছুরি, চাকু ও হকিস্টিক দেখা গেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। তারা মূলত চাঁদাাবজি, ছিনতাই, ইভ টিজিং, আধিপত্য বিস্তার এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে মারামারি করে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘গ্যাং লিডার ফেসবুকে ডট গ্যাং গ্রুপের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। অস্ত্র হাতে দৌড়াদৌড়ি, মারামারির ছবি-ভিডিও শেয়ার করে। কিশোর বয়সের হিরোইজম বা বীরত্ব প্রদর্শনের প্রবণতা থেকে তারা ফেসবুকে বিষয়গুলো শেয়ার করে। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে যার নিয়ন্ত্রণও আবার লিডারের হাতে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে মদদদাতা হিসেবে কয়েকজন তথাকথিত বড় ভাইয়ের নাম পেয়েছি। এরাই তাদের আর্থিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জমি দখল, মারামারি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। এসব মদদদাতাদের কারও কারও রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আবার মদদদাতাদের যারা কথিত বড় ভাই তাদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজনীতিক আছে।’

অভিযানে থাকা র‌্যাবের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত চকবাজার এলাকার মো. আকিব প্রকাশ ছুরি আকিব, তার ভাই ফাহিম মুন সুমন এবং জামালখান এলাকার তানজীরুল আলম ও জাহেদুল আলম কয়েকটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে। ডট গ্যাং-ও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

চকবাজার থানার ছাত্রলীগের এক নেতা সারাবাংলাকে জানান, চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের আশপাশে বেশ কয়েকটি আড্ডাস্থল আছে। একেকটি আড্ডাস্থলের নিয়ন্ত্রণ একেকজন তরুণের হাতে। শাফায়েত ফাহিম, মাশফিকুল ইসলাম রাফি, অন্তু বড়ুয়া, সাদ্দাম হোসেন ইভান, রবিউল ইসলাম রাজুসহ আরও কয়েকজন এসব আড্ডার নিয়ন্ত্রক।

গ্রেফতার হওয়া ছয় কিশোর মূলত ঘুরেফিরে এসব আড্ডার সদস্য। এরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও তাদের কারও কোনো পদ-পদবি নেই বলে জানান এই নেতা।

র‌্যাব অধিনায়ক মাহবুব আলম বলেন, ‘ডট গ্যাং ছাড়াও চকবাজারে আরও অন্তঃত পাঁচটি গ্রুপ আছে। আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের মদদদাতা হিসেবে যাদের নাম আসছে, তাদের কয়েকজনের ওপর নজরদারি ‍শুরু করেছি। সম্পৃক্ততা পেলে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

গ্রেফতার সাতজনকে চকবাজার থানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সারাবাংলা/আরডি/একে

কিশোর গ্যাং টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর