আন্দোলনের নামে ‘ভোটের মাঠে’ বিএনপি, নির্বাচন পরিস্থিতি বুঝে!
১ মার্চ ২০২৩ ২২:৪৭
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলগুলো আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের জন্য মাঠ গোছাতে শুরু করেছে। বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোটের মতো দলগুলো তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় সফর ও গণসংযোগের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে মহাজোটের শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণায় নেমেছে। তবে বিরোধীদলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া নির্ভর করছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর।
সূত্র বলছে, সরকারবিরোধী ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর (গণতন্ত্রমঞ্চ) সঙ্গে বিএনপির বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা চলছে। তারা চিন্তায় আছে, বিএনপি কখন কী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এমনকি বিএনপি গণতন্ত্র মঞ্চকেও তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে ঢিমেতালে চলছে তাদের আন্দোলন কর্মসূচি। এমনিতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে- বিএনপির একটি অংশ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এই গুঞ্জন ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ও জোট নেতাদের ভাবিয়ে তুলছে। যদিও এ প্রসঙ্গে কেউ মুখ খুলছেন না।
তবে গণতন্ত্র মঞ্চের অধিকাংশ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির একটি অংশ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে- এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারব- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আমাদের মাঝেও।
সূত্রগুলো বলছে, আসছে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেজন্য বিএনপি ও সরকারবিরোধী ছোট ছোট দল বা জোটগুলো নিজ নিজ এলাকায় কৌশলে নির্বাচনি গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই গণসংযোগ এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এই গণসংযোগ সরকার পতনের আন্দোলন বেগবানের পাশাপাশি নির্বাচনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করছে।
সূত্র বলছে, চলতি মাসের ১০ অথবা ১৫ তারিখ যৌথ ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে সরকার পতনের চূড়ান্ত যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি ও গণতন্ত্রমঞ্চের। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটুকু হবে তা নির্ভর করছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর। এজন্য তারা নির্বাচনি মাঠ গোছানোসহ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির নেতারা গণসংযোগ করছে আন্দোলনকে বেগবান করতে, নির্বাচনের জন্য নয়। আন্দোলনের জন্যই মূলত গণসংযোগ। আমরা আন্দোলনের ইস্যু নিয়ে মাঠে আছি এবং থাকব।’
নির্বাচন নিয়ে সরকার সংলাপ আহ্বান করলে আপনার কি অংশ নেবেন?- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার সংলাপের উদ্যোগ নেয়নি। উদ্যোগ নিলে তখন দেখা যাবে।’ বিএনপির অপর এক নেতা বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনি এলাকা ঠিক রাখছি। দলের সিদ্ধান্ত কখন কী হয় তা বলা মুশকিল। সবকিছুই আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’
এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদর রহমান মান্না বলেন, ‘আমারা আমাদের দাবিতে অটল রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি সরকারি দল ও মহাজোটের শরিকরা নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নেমেছে। কিন্তু বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি তাদের বডি লাঙ্গুয়েজেও তেমন আভাস পাইনি। তবে এলাকার কেউ যদি নির্বাচনি প্রচার চালায় সেটি ভিন্ন। তারা আন্দোলনকে বেগবান করতে গণসংযোগ চালাতে পারে।’
সংলাপ প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘এই সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসতে পারি।’
নির্বাচন ও আন্দোল নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আামদের মনযোগ আন্দোলনের দিকে। আন্দোলনে না জিতলে কিছুই হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্যই দরকার গণসংযোগ। এক্ষেত্রে আমরা আন্দোলনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ‘৬৯ ও ‘৯০ এর আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছিল। ঠিক তেমনি আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য আগামী ১০ অথবা ১৫ মার্চ যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করে আন্দোলনে নামব।’ সংলাপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার সংলাপের উদ্যোগ নিলে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে গণতন্ত্রমঞ্চ সংলাপে যেতে পারে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাবলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল হিসেবে বলতে পারি, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার স্বার্থে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। আমরা এই সিদ্ধান্তে অটল।’ তারপরও পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম