Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তানকে স্বীকার করছেন না মেট্রোশপের মালিক

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ মার্চ ২০২৩ ১৯:৫২

ঢাকা: আগের স্ত্রী সন্তান থাকলেও প্রেমিকাকে জানান, তারা সিঙ্গাপুরে থাকেন। কখনও দেশে আসবেন না। দীর্ঘ সম্পর্কের পর নানাভাবে ভুলিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর কানিজ ফামিতা সুমাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় মেট্রোশপের মালিক কামরুল হাসানের। এরপর প্রথম স্ত্রী আর সন্তানেরা দেশে চলে আসে। এদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীও অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। শুরু হয় স্বামী আর প্রথম স্ত্রীর অত্যাচার নির্যাতন। বাসা ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মায়ের বাসার কাছাকাছি একটি বাসা ভাড়া করে দেন কামরুল হাসান। গত বছর ঘর আলো করে দ্বিতীয় স্ত্রীর কোলে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান।

এখন কামরুল হাসান দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাসা ভাড়া দেন না, খোঁজ রাখেন না সন্তানের। উল্টো ব্যবসায় লোকসানের কথা বলে স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করেন। যৌতুক না পাওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে করেছেন শারীরিক নির্যাতন, দিচ্ছেন ‘স্বামী স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তের দৃশ্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি।

এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শ্যামপুর মডেল থানায় স্বামী কামরুল ইসলাম চকদারের বিরুদ্ধে স্ত্রী কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর-১০৯৮।

কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া সারাবাংলাকে অভিযোগ করে বলেন, ইডেন কলেজে পড়ার সময় আমি একটি কোম্পানিতে জব করতাম। সেই কোম্পানির একটি তেল তার সুপার শপে দিতে গিয়ে প্রথম পরিচয় হয়। এরপর পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। প্রথমে তিনি সিঙ্গেল বলে দাবি করেন। এরপর ধানমন্ডিতে একটি কফি শপে সাক্ষাৎ হয়। তখন তাকে অবিবাহিত মনে হয়নি। এরপর তার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি। কিন্তু তখন তিনি জানান, তার স্ত্রী সন্তান আছেন তারা সিঙ্গাপুরে থাকেন। তারা আর দেশে ফিরে আসবে না কখনও। ২০১৯ সাল থেকেই বিয়ের জন্য বলতে থাকেন। আমি তার সম্পর্কে আরও বেশি খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি।

সুমাইয়া বলেন, ‘তার (কামরুল হাসানের) ধানমন্ডি-৬ হায়দার ভিলায় একটি ফ্ল্যাট আছে। ১৬, পুরানা পল্টনে একটি ফ্ল্যাট আছে এবং ১১, পুরানা পল্টনে নিজের কেনা জায়গায় মেট্টো শপ করা আছে। এসব তোমার সম্পদ। কাজেই তুমি আমাকে বিয়ে করো।’

সুমাইয়া বলেন, ‘বিয়ের পর কোথায় থাকবো জানতে চাইলে কামরুল জানান, বিয়ের পর ১৬ পুরানা পল্টনের বাসায় তোমাকে তুলবো। সেখানেই তুমি থাকবে। এরমধ্যেই করো না শুরু হয়ে গেল। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হতে শুরু করল। পুরনো যারা তার শপে মালামাল সরবরাহ করত তাদের বিল পরিশোধ না করায় মামলা দেওয়া শুরু হলো। এরমধ্যে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত থানায় মামলা হয়েছে। পচা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ মালামাল দেওয়ায় কাস্টমারও ভোক্তা অধিকারে মামলা দিলেন। মামলায় অনেক টাকা জরিমানাও হলো। এসব নিয়ে আমার কাছে হতাশা প্রকাশ করে আর বলে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করো। এক পর্যায়ে আমিও পরিবারে বলি এবং আমার বাবা মা তাকে ডেকে পাঠালে সে আমার শ্যামপুরের বাসায় আসে। আমার বাবা বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে আমার জোরাজুরিতে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর পারিবারিকভাবে বিয়েটা হলো। বিয়ের পর পল্টনের বাসায় তুলল। ২০২১ সালে এসে আমি অন্তঃসত্ত্বা হলাম। তার প্রথম স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতে পেরে ফোনে গালিগালাজ করল এবং দেশে চলে এলো।’

প্রথম স্ত্রী দেশে আসলে আমাকে পল্টনের বাসা থেকে বের করে দিয়ে শ্যামপুরে বাবার বাসার পাশে একটি বাসা ভাড়া করে দিল। কিন্তু চুক্তিনামা করল আমার নামে। এরপর মাস গেলেই বাড়িওয়ালা আমার কাছে ভাড়া চায়। সিজার করে সন্তান হলো। সেই সন্তানের ভরণপোষণও দেয় না। সন্তান নাকি তার নয়। বাসায় আসে মাঝেমধ্যে। টাকার কথা বললে উল্টো আমার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে দিতে বলেন। বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিতে বলে। আমি এসব করিনি। কারণ আমার আর সন্তানের ভরণপোষণ যে দেন না সে কি করে অন্যের টাকা নিয়ে পরিশোধ করবে।

সুমাইয়া বলেন, ‘আমরা কত কষ্টে জীবনযাপন করছি। এত দিন আদালত বা আইনের আশ্রয় নিইনি এই ভেবে যে সন্তানের বয়স মাত্র ১৪ মাস। আদালতে যাইনি, দেখি মানিয়ে চলতে পারি কি না? কিন্তু আর কত মানিয়ে চলা যায়? বাচ্চার দুধ লাগে, চিকিৎসার খরচ লাগে। এ সবের দায়িত্ব নেয় না উল্টো অপবাদ দেয়। তাকে নিয়ে আর থাকা যায় না।’

সুমাইয়া কান্না করে বলেন, ‘গত ৪ জানুয়ারি আমাকে একটি মেসেজ পাঠায়। আমার ছবি নাকি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাসায় এসে মারধর করে যায়। এরপর ফোন ধরেন না, এদিকে বাচ্চা খুবই অসুস্থ। গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি আমি তার পল্টনে শপে যাই। সেখানে ফোন না ধরা এবং বাচ্চার অসুস্থতার কথা বলতেই তিনি জানান, কিছুই দিতে পারবে না। এক পর্যায়ে আমাকে মারধর শুরু করেন। তখন আমিও তাকে উল্টো দুই-একটা মারধর করি। এতে শপের কিছু জিনিসপত্র হয়ত ভেঙে যেতে পারে। এরপর আমি চলে আসি। সে রাতে বাসায় আসে এবং আমাকে মারধর করে যায়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত স্বামী কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এসব ঘটনার বিষয়ে সে মামলা করেছে আমিও মামলা করেছি। তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না। যা হয় আদালতে হবে। এর বেশি কিছু আপনাকে বলতে পারছি না।’

জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার এসআই তদন্ত কর্মকর্তা সোহাগ ইসলাম বলেন, ‘জিডি হয়েছে। বিষয়টি ওসি স্যার নিজেই দেখছেন। তিনি এরইমধ্যে সুমাইয়ার বাসায় গিয়েছিলেন। আমিও গিয়েছিলাম। তদন্ত শেষে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

টপ নিউজ দ্বিতীয় স্ত্রী মেট্রো সুপার শপ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর