‘জনগণ এবার তামাশার নির্বাচন হতে দেবে না’
৪ মার্চ ২০২৩ ১৯:৩০
ঢাকা: গত দুইটা নির্বাচনের মতো জনগণ এবার আর ‘তামাশা’র নির্বাচন হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে উত্তরা পূর্ব থানার আওউয়াল এভিনিউ সড়কে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে, তারা যেভাবে গত দুইটা নির্বাচন করেছে এবারও ওইভাবে নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। আর আবারও সেইভাবে জনগণকে শোষণ করবে, জনগণের সম্পদ লুট করবে। মানুষ এটা আর হতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে, রাজপথে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই আন্দোলন সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এবার আর সেই তামাশার নির্বাচন হতে দেব না, এদেশের মানুষ হতে দেবে না।”
নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমাদের এই আন্দোলন জনগণের অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলন সমগ্র মানুষের যে কথা বলার অধিকার, সেই অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন।’
‘গত ১৫ বছর ধরে আমরা এই আন্দোলনে আছি। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকব। আমরা শান্তির সঙ্গে আন্দোলন করছি, শান্তির সঙ্গে এই আন্দোলনে থাকব। আমাদের বাধা দিলে সেই বাধা অবশ্যই আমরা অতিক্রম করব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এই জনগণ বাধা প্রতিরোধ করবেই করবে’- বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমার নিজের মতো করে কাটা-ছেড়া করে তোমাদের মতো করে ছাপিয়ে নিয়েছ, যেখানে জনগণের কোনো অধিকার সংরক্ষিত হয়নি, সেই সংবিধান?
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ভারতের মেঘালয়ে অবস্থানরত সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ অসংখ্য নেতা এখনও কারাগারে আছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুম করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে গুম করে দেওয়ার পরে ভারতে ফেলে রেখে আসা হয়েছিল। সেখানকার আদালত তাকে মুক্ত করে দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অবিলম্বে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।’
উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।
পরে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন।
কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর ৬২ থানায় পদযাত্রা করে বিএনপি। যাত্রাবাড়িতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শাহবাগে মির্জা আব্বাস, বংশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, পল্লবীতে আবদুল মঈন খান, গুলশানে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহানপুরে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পল্টনে আবদুস সালাম, কাফরুলে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুপনগরে হাবিবুর রহমান হাবিব, চকবাজারে ফরহাদ হালিম ডোনার, মোহাম্মদপুরে মামুন আহমেদ, ভাষানটেকে আবদুল হাই শিকদার, তুরাগে জহির উদ্দিন স্বপন, কদমতলীতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রামপুরা খায়রুল কবির খোকন, শ্যামপুরে আসাদুজ্জামান রিপন, ধানমন্ডিতে নাসির উদ্দিন অসীমসহ বিভিন্ন থানায় কেন্দ্রীয় নেতারা নিরব পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন। এসব পদযাত্রা যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মতস্যজীবী দল, শ্রমিক দল, জাসাস, ছাত্র দলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়।
এ ছাড়া সকালে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে, ১২ দলীয় জোট রাজধানীতে সকালে বিজয়নগরে পানির ট্যাংক থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বিজয় নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টনে মোড়ে থেকে আলাদাভাবে পদযাত্রা করে।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ