Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কারও বাক স্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল অ্যাক্ট করা হয়নি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩৬

ঢাকা: কারও বাক স্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিসিএ অ্যাক্ট) করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ ‘শেপিং অব থার্ড সেক্টর-ল এন্ড পলিসিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

আইন সংশোধনের জন্য নাগরিক সমাজ কর্তৃক প্রস্তাব উপস্থাপন উপলক্ষে ইউএসএইড, ইন্টারন্যাশনাল-সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) ও কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটা কথা আগেই বলে রাখি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কিন্তু কারও বাক স্বাধীনতা কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করা হয় নাই। পেনাল কোডে আমাদের অপরাধগুলো লিপিবদ্ধ করা আছে। চুরি করলে কি শাস্তি হয়, তা সেখানে লেখা আছে। প্রযুক্তির বিস্তার এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন চুরি আর ফিজিক্যালি করতে হয় না, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’

তিনি বলেন, ‘আইনটি ভেটিং এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে এলে অংশীজনদের সঙ্গে একটি বৈঠক করা হয়েছিল। এরপর সংসদে স্থায়ী কমিটির সভায় এটকো ও সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে অংশীজনদের কিছুকিছু সাজেশন বা পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছিল। দুঃখের হলেও সত্য এই আইন করার পর আমরা অনেক মিসইউজ ও অ্যাবিউজ দেখেছি। যখন এই আইনের যথেষ্ঠ অপব্যবহার হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসেছিলাম। এই বৈঠকে আমরা প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক।

এরপর আমি জেনেভায় গিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পৃথিবীতে এরকম কোন আইন আছে কিনা, যদি থেকে থাকে তাহলে তার বেস্ট প্রাকটিসগুলো কি কি? সেটা জানা এবং সেটাকে এই আইনের সাথে যুক্ত করে দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘ওই বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিস, আইন, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি ডিভিশন এর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে এ বিষয়ে একটি সাজেশন পাওয়া গেছে এবং সেটা সরকার দেখছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া আছে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলেই কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।

সব আইনে কিছু কিছু সিস্টেমিক প্রবলেম আছে, কিছু কিছু আইনে ইমপ্লিমেন্টশনে (বাস্তবায়নে) প্রবলেম আছে। যখন বাস্তবায়নে সমস্যা হয় তখন আইনটা আলোচনার টেবিলে আসে। তখন বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো কীভাবে রিজলব (সমাধান) করা যায়, তা দেখা হয়। ঠিক সেই কারণে আজকেও আমি বলি, এই আইনটা নিয়ে আবার বসব, যদি রুলসের (বিধি) পরিবর্তন করে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি, অবশ্যই আমরা সে দিকে যাব। যদি তারপরও যদি আমরা দেখি রুলস না আইনটির কিছু সংশোধন করার প্রয়োজন আছে, তাহলে আমরা সেটাও করবো।’

তিনি বলেন, ‘যদি ঢালাওভাবে আমরা বলি আইনটা বাতিল করে দেওয়া হোক, তাহলে সেটা যুক্তিসঙ্গত কারণ হবে মনে হয় না। আজকে এখানে এ বিষয়ে যা বলা হয়েছে সে বিষয়ে আপনাদের সাথে বসব। সেটা আপনারা চাইলে রোজার আগেও হতে পারে বা রোজার পরেও হতে পারে। আমার মনে হয় রোজার আগে বসলেই ভালো হবে, কারণ এ বিষয়টি যাতে সামনের বাজেট অধিবেশনেই সংসদে তুলা যায়।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যেরকম এদেশের নাগরিক। আমরাও একই রকম এদেশের নাগরিক। আপনাদের যেমন সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, আমাদেরও সেরকম আনুগত্য আছে। আমরা চাই না সংবিধান বিরোধী কোন আইন হোক।’

‘বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাতে সঠিক ও সাবলিলভাবে চলতে পারে, সেজন্য বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ এর বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ণের বিষয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সাথে কথা বলা হবে।’

এর আগে, অনুষ্ঠানে আইন সংশোধনের জন্য নাগরিক সমাজ কর্তৃক প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, এতে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির হিসেবে বক্তব্য দেন ইউএসএইড-এর মেধাবি গিরি।

ইউএসএইড এর প্রমোটিং এ্যাডভোকেসি এন্ড রাইটসের (পিএআর) মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ইউএসএআইডির বাংলাদেশের ডেপুটি মিশন ডাইরেক্টর রেন্ডি আলী (Randy Ali) টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী খুশী কবিরসহ দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্নস্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আইসিটি অ্যাক্ট টপ নিউজ বাক স্বাধীনতা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর