করোনার ৩ বছর: নমুনা পরীক্ষা-সংক্রমণ-মৃত্যুর তথ্য এক নজরে
৮ মার্চ ২০২৩ ১৯:১৪
ঢাকা: ২০২০ সালের ৮ মার্চ বিকেলে দেশে প্রথমবারের মতো তিনজনের নমুনায় নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এর আগে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও সেদিনের পর থেকেই মূলত শুরু হয় এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই। ধাপে ধাপে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সময়ের পালাবদলে আসে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ।
সংক্রমণ শনাক্তের পর এই তিন বছরে গুনে গুনে পেরিয়ে গেছে ১৫৬ সপ্তাহ তিন দিন তথা এক হাজার দিন। এই সময়ে করোনা সংক্রমণ ঢাকা থেকে ছড়িয়েছে সারাদেশে। শুরুর কিছুদিন সংক্রমণের হার ছিল বেশ কম। পরে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। দিন বাড়তে থাকার সঙ্গে পাল্টাতে থাকে ভাইরাসটির রূপও। আর ডেল্টা, আলফা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি নানা সাবভ্যারিয়েন্টের কারণে এই তিন বছর নানা ধাপে দেখা দেয় সংক্রমণের ঢেউ। ফলে শনাক্ত, সংক্রমণের হার ও মৃত্যু— কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমতে থাকে।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা ছিল, শীতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা তাই নিতে বলেছিলেন বাড়তি সতর্কতা। তবে বাংলাদেশে শীতে সংক্রমণের হার কমতে থাকে। শুধু তাই নয়, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ডিসেম্বর থেকে দেশে শনাক্তের হার কমতে কমতে তলানি নামে। ফলে বছরের ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন সংক্রমণের হার দেখা যায়।
২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে পর্যবেক্ষণমূলকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন ঘোষণা করার পর এদিন ২৬ জন ভ্যাকসিন নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ও ৫ থেকে ১২ বছর বয়সীদেরও ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করায় মানুষের মৃত্যুঝুঁকি কমে আসতে থাকে। তবে এটি কিন্তু সংক্রমণ কমায় না। আর এ কারণে সতর্কতায় ঘাটতি দেখা দিলে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সবধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
করোনা সংক্রমণের ৩ বছরে নমুনা পরীক্ষা (৮ মার্চ, ২০২০–৭ মার্চ, ২০২৩)
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হন ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ১৫ কোটি ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৯৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৮ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত এক মাস সময়ে সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে এক মাসে সর্বনিম্ন তিন হাজার ৭৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় শনাক্তের প্রথম দিকে। অর্থাৎ ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। ২০২১ সালের ৩ আগস্ট দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা ৫৫ হাজার ২৮৪টি। ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২০২০ সালের ৯ মার্চ। এদিন ৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৯৪ লাখ ৭৪৫টি। এটিই এক বছরে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যান। এছাড়াও, ২০২২ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৩টি। এটিই এক বছরে সর্বনিম্ন নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যান।
করোনা সংক্রমণের ৩ বছরে সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য (৮ মার্চ,২০২০ – ৭ মার্চ, ২০২৩)
২০২০ সালের ৮ মার্চ তিন জনের নমুনায় প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৯ টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
২০২১ সালের ২৮ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এটি ২৪ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। সংক্রমণ শনাক্তের পর গত তিন বছরে দেশে নয় দিন কোনো নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি।
দেশে ২০২১ সালের ৮ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬৫ হাজার ৮২৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তবে সর্বনিম্ন আক্রান্তের সংখ্যা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে একই বছরের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ টি নমুনায় কোভিড-সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭২ টি নমুনায় কোভিড-সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২০২২ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে ৯০ হাজার ১৭৭ টি নমুনায় কোভিড-সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
করোনা সংক্রমণের ৩ বছরে মৃত্যু (৮ মার্চ,২০২০ – ৭ মার্চ, ২০২৩)
দেশে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ সর্বপ্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য জানায় আইইডিসিআর। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এই সময়ের মাঝে ২২৩ দিন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি। তবে ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু’দিনেই ২৬৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান এটি।
২০২১ সালের ৮ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ছয় হাজার ৮১৮ জনের কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে ২০২১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত আট হাজার ৪৬২ জন সংক্রমিত রোগী মৃত্যুবরণ করেন। ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত ২০ হাজার ৬২৭ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী মারা যান।
তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে সর্বশেষ এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৩৫৬ জন।
নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার
দেশে ২০২১ সালের ৮ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে সংক্রমণ সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের হার দেখা যায়। এই সময়ে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশে ২০২২ সালের ৮ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্তের হার দেখা যায়। এ সময় দেশে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের ছিল ০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
সংক্রমণ অনুপাতে মৃত্যুর হার
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সংক্রমণ অনুপাতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার ছিল ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২২ সালের ৮ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়ে দেশে সংক্রমণ অনুপাতে মৃত্যুর হার ছিল ০ দশমিক ১৭%। এটিই দেশে সংক্রমণ অনুপাতে সর্বনিম্ন মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের প্রভাবে পড়েছে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতি-প্রকৃতিতে। ফলে সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে। তবে সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নজরদারি করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হিতকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণের হার কমছে। সাম্প্রতিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও আমাদের এখানে এটি এখন বিপদসীমার নিচে। এর অন্যতম একটি কারণ ভ্যাকসিনেশনে আমাদের সফলতা। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। তবে এগুলো করোনা শেষ হয়ে গেছে ভেবেই ফেলে রাখা যাবে না। বরং এই সফলতাগুলোকে স্থায়ীত্ব দিতে হবে ও আরও কার্যকর করতে হবে ‘
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শনাক্তের হার শতকরা পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে এলে সেটিকে স্থিতিশীল বা সহনীয় পর্যায় বলা যেতে পারে। আমাদের এখানে একটা দীর্ঘ সময় তেমনভাবেই যাচ্ছে। সংক্রমণ হারও অনেক কম আছে। তবে এখনো আমাদের রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিশ্বের অনেক দেশে কিন্তু এখন সংক্রমণ কমেনি। যতদিন পর্যন্ত একটা রোগীও পাওয়া যাবে না ততদিন পর্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি আমাদের মেনে চলতেই হবে। যেকোনো ধরনের শিথিলতার সুযোগে কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।’
এ পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সিকোয়েন্সিং ও সার্ভিল্যান্স করে যাওয়ার দিকে গুরুত্ব দেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জিন পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষণীয়। এক ভেরিয়েন্ট শেষ হতে না হতেই আরেক ভেরিয়েন্ট চলে এসেছে। তবে ওমিক্রন রূপ বদলালেও বাংলাদেশে নতুন অন্য ধরন শনাক্ত হয়নি, সংক্রমণও কম। কিন্তু চীনে হয়েছে। ফলে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। একই সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করাও জরুরি।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কিছু অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় আমরা খুব ভালো কিছু করেছি এমনটা বলা যাবে না। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে সব ঘাটতি ছিল তার কিছুক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানোসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে উন্নতি দেখা গেছে। কিন্তু এগুলোর পরিচর্যা জরুরি। সেইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যে বরাদ্দ অনেক কমে গেছে। অর্থাৎ গুরুত্ব কমে গেছে। অথচ আমরা কোভিডের সময় দেখেছি, জনস্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্র থেকে যদি বলি তাহলে বলব, সামনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও এই শিক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি।’
দেশে ১ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ দেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, ‘নতুন ভ্যাকসিন যখনই আসবে তখনই প্রয়োগ শুরু হবে। আপাতত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া চলমান থাকবে।’
কোভিড-১৯ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে প্রভাবের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যকর সিদ্ধান্তে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে এ পরিস্থিতি যেন আর কখনোই খারাপের দিকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালোভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে। এখনো অনেক দেশে চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন রোগী খুবই কম পাচ্ছি। আগে একটা ল্যাব ছিল। কিন্তু এখন সারাদেশে ল্যাব রয়েছে। যে কেউ চাইলেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারে এখন। হাসপাতালগুলোতেও অনেক উন্নতি আছে আমাদের। হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা, অক্সিজেন প্লান্ট বসানো থেকে শুরু করা আমরা চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংখ্যাও বাড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ এমনিতেই তো আর কমে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সবাই যেভাবে কাজ করেছে তার ফসল বর্তমান পরিস্থিতি। কিন্তু তাও আমাদের সজাগ থাকতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের সবাই জানে। এবারও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে দ্রুত জনসংখ্যার অধিকাংশকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এনে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিনেশন শুরুও করতে পারেনি।’ সেজন্য কেউ ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম