Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে ছড়াচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাস, শনাক্ত করবে কে?

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ মার্চ ২০২৩ ১১:৫১

ঢাকা: ১০ মাস বয়সী আফরিন প্রায় এক মাসের বেশি সময় সর্দি ও কাশিতে ভুগছিল। থেমে থেমে জ্বর এলেও সেটা এক বা দু’দিন পরে সেরে যেতো। তবে ২ মার্চ থেকে তার জ্বর আর কমেনি। ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রির উপরে জ্বর উঠছিল বারবার। চিকিৎসকের পরামর্শে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে নমুনা পরীক্ষায় জানা যায় ‘অ্যাডিনোভাইরাসে’ আক্রান্ত শিশু আফরিন। তার মায়েরও জ্বরের উপসর্গ প্রায় একইসময় থেকে। নমুনা পরীক্ষায় জানা যায় আফরিনের মাও একই ভাইরাসে আক্রান্ত।

বিজ্ঞাপন

একই পরিবারে ১৭ মাস বয়সী আরিয়ান ও ৫ বছর বয়সী সাফিয়াও একমাসেরও বেশি সময় থেকে ভুগছিল জ্বর, সর্দি, কাশিতে।

আরিয়ান ও সাফিয়ার মা ইসমাত আরা আঁখি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওদের জন্মের পর থেকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সব কিছু করে থাকি। এবারও তাই করছিলাম। কিন্তু আরিয়ানের জ্বর ভালো হলে সাফিয়ার আসতো আর ওরটা ভালো হলে আরিয়ানের। প্রায় দুই মাস এমন অবস্থা। এর মাঝে আমারও প্রায়ই জ্বর ও সর্দি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘ভাবছিলাম ঋতু পরিবর্তনের ফলে এমন হচ্ছে হয়তো। কিন্তু সাফিয়ার একবার কাশির সঙ্গে কফে রক্ত দেখতে পাই। এরপরে একটানা জ্বর ওর আর গলায় কফ যেন কমছিলই না। এরসঙ্গে আবার যুক্ত হয় পাতলা পায়খানা। শরীর বেশি দুর্বল হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে নমুনা পরীক্ষা শেষে জানা গেলো অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত সাফিয়া। আরিয়ানের নমুনা পরীক্ষার পরেও একই ফলাফল আসে।’

সাংবাদিক উজ্জল জিসানের ৮ বছরের ছেলে সাদমানের জ্বর আসার পরে চিকিৎসকের পরামর্শে নাপা খাওয়ানো হয়। কিন্তু তিন দিন জ্বর ১০৩ ডিগ্রির উপরে উঠলে চিকিৎসকের পরামর্শে নাপার পাশাপাশি শুরু করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক। এসময় কিছু খেতে পারছিল না সাদমান।

উজ্জল জিসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাদমানের বমির পরিমাণ বাড়তে থাকলে আবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। কারণ এ সময় বমির সঙ্গে চোখে রক্ত আসতেও দেখা যায়। এ সময় দুইটা নমুনা পরীক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু তাও জ্বর না কমার কারণে রাজধানীর শিশু হাসপাতালের আরেকজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। এ সময় আগের সব ওষুধ বাদ দিয়ে নতুনভাবে সাবোজিটরের পাশাপাশি শুধুমাত্র নাপা ওষুধ দেওয়া হয়। এরপরে জ্বর কমে আসতে থাকে। এরপরে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চোখের চিকিৎসা শুরু করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সাদমান ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলেও ১০ মার্চ থেকে আমার দুই বছরের শিশুর জ্বর আসে। তার চোখও লাল হয়ে আছে প্রায়। একইরকমভাবে লাগাতার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর আসে। ওষুধ খেলে দুই ঘণ্টা জ্বর কিছুটা কমে আসে। কিন্তু এরপর আবার সেই ১০৩ ডিগ্রি। কোনোভাবেই কমছে না। খবরে দেখি অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তের হার বাড়ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা কিভাবে বা কোথায় গেলে পরীক্ষা করানো যাবে তাই তো জানি না।’

হ্যাঁ, ‘অ্যাডিনোভাইরাস’ —নতুন কোনো রোগের নাম না আবার নতুন কোনো ভাইরাসও না। তবে নভেল করোনাভাইরাস পরবর্তীতে এই রোগের নাম সামনে আসে ভারতের কলকাতায় শিশুদের মৃত্যুর পরে। এখন পর্যন্ত ৫০ জনেরও অধিক শিশু দেশটিতে মারা গেছে ‘অ্যাডিনোভাইরাসে’ আক্রান্ত হয়ে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি শিশু বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে বাড়ছে অ্যাডিনোভাইরাসের লক্ষণযুক্ত রোগী।

তবে বেসরকারিভাবে কিছু হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত রোগ শনাক্ত করার জন্য নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। শুধু তাই না, কারা করবে এই নমুনা পরীক্ষা— এই বিষয়েও পাওয়া যায়নি কোনো উত্তর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাডিনোভাইরাসও করোনার মতোই একটি ‘রেসপিরেটরি ভাইরাস’, অর্থাৎ যা শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর উপসর্গগুলোও অনেকটা কোভিডের মতোই– এবং এটিও অত্যন্ত ছোঁয়াচে বা সংক্রামক। আর যেহেতু ভারতের কলকাতায় এটি বেড়েছে তাই বাংলাদেশেও বাড়তে পারে। কিন্তু অ্যাডিনোভাইরাসের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কিনা তা কিন্তু এখনও নিশ্চিত না। তাই দেশে সার্ভিল্যান্স করাটা জরুরি।

কিন্তু সার্ভিল্যান্স করবে কে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা জানান, সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নিয়মিত সার্ভিল্যান্স করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি বোঝার জন্য তাদের সেটা চালু রাখা প্রয়োজন।

তবে এ বিষয়ে আইইডিসিআর-এর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের সক সার্ভিল্যান্স রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হওয়ার তথ্য জানালেও সেখানে কোনো আপডেট মেলেনি।

সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে না চাইলেও তাদের কাছে ‘কোনো আপডেট নেই’ বলে জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) জানিয়েছেন, দেশের কোনো স্থানে যদি অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের সংবাদ পাওয়া যায় তবে তারা অবশ্যই সেটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শনাক্তের তথ্য যদি স্বাস্থ্য অধিদফতরে জানানো না হয় তবে সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না বলে জানান তিনি।

যেসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে?
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য বছর ঋতু পরিবর্তনের ফলে শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সবারই জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানারকমের ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যেতো। কিন্তু এবার শিশু কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের জ্বর একবার উঠলে আর সহজে নামছে না।

কিছুকিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে শিশুদের জ্বর নেই কিন্তু সর্দির পাশাপাশি হালকা ডায়রিয়া হচ্ছে।

একইসঙ্গে কিছু খেতে গেলেই বমি হচ্ছে। একইসময়ে চোখ হয়ে যাচ্ছে রক্তের মতো লাল। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জ্বর উঠে যাচ্ছে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্যারাসিটামল খেলে জ্বর নামছে ঠিকই। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের ছুঁয়ে যাচ্ছে সেই ১০৪ ডিগ্রিই।

বিষয়টা কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশাপাশি প্রাইভেট চেম্বারে আসা অধিকাংশ রোগীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে ‘অ্যাডিনোভাইরাসে’র এক বা একাধিক উপসর্গ। অনেকেই জানাচ্ছেন শিশু স্কুল থেকে জ্বর নিয়ে আসছে বাসায় আর এরপরে অন্যদের মাঝে সংক্রমণ ঘটছে।

অন্যান্য সময় ভাইরাল ফিভার, চিকেন পক্স এগুলো ঋতু পরিবর্তনের মতো স্বাভাবিক বিষয় হলেও এবারে ভোগান্তিটা বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বর সহজে না নামার পাশাপাশি বমির বিষয়টি শিশুদের দুর্বল করে তুলছে। এমন অবস্থায় এগুলো ‘অ্যাডিনোভাইরাসে’ই লক্ষণ।

চিকিৎসকরা জানান, এ বারের অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণে দু’টি বিষয় খুব বেশি করে দেখা যাচ্ছে। এক, নন-রেমিট্যান্ট পার্সিস্টেন্ট ফিভার। অর্থাৎ, শরীরের তাপমাত্রা কখনও স্বাভাবিক (৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) জায়গায় আসছে না। প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পরেও টানা চার-পাঁচ দিন জ্বর থেকে যাচ্ছে অনেকের। আর তুলনায় জ্বর কম হলেও আক্রান্ত বাচ্চাদের একাংশের চোখের সাদা অংশটা রক্তের মতো লাল হয়ে উঠছে। তাতে চোখ গোলাপি-লাল হয়। কিন্তু টকটকে লাল হওয়ার অর্থ, চোখের ভিতর রক্তপাত হয়েছে।

তবে চিকিৎসকরা এতে ভয় না পেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। পাঁচ-ছ’দিন পেরিয়ে গেলেও বাচ্চাদের যদি জ্বর থেকেই যায় কিংবা প্রচুর বমি বা পায়খানা হয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হয় অথবা শ্বাসকষ্ট হয় কিংবা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, তখন দেরি না-করে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ তাদের।

অ্যাডিনো ভাইরাস কী?
অ্যাডিনো ভাইরাস সাধারণত চোখ, শ্বাসযন্ত্র, মূত্রনালি ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ২ দিন থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এই ভাইরাসের সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলি হল জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি।

সঠিক সময়ে এই ভাইরাসের চিকিৎসা না হলে রোগী মেনিনজাইটিস এবং এনসেফালাইটিসের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপে শুধুমাত্র শিশুরাই নয় বরং যেকোনও বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অ্যাডিনোভাইরাসে শিশুদের ফুসফুস ও শ্বাসনালী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো বয়সী মানুষ অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও ফুসফুসে ইনফেকশন হতে পারে। বড়রা শ্বাসনালীর উপরিভাগে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে।

কিভাবে ছড়ায় অ্যাডিনো ভাইরাস?
অ্যাডিনো ভাইরাসের চরিত্রটা অনেকটা কোভিডের মতোই। এই সংক্রামক ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকেই ছড়ায়। রোগীর ছোঁয়া কোনো জিনিসের সংস্পর্শে এলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসও সরাসরি আক্রমণ করেতে পারে ফুসফুসকে।

শনাক্ত হলেও গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার
রাজধানীর একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বেসরকারি হাসপাতালে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শিশুর অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়ে জানতে পারেন। তার মাঝে একটি হাসপাতাল হলো রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত স্কয়ার হাসপাতাল।

প্রতিষ্ঠানটির পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক আইসিইউ কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ সাঈদ বলেন, ‘আমাদের কাছে এটার ডায়াগনোসিস করার পিসিআর সিস্টেম ও কিটস আছে। আমরা যতগুলো বাচ্চাকে পরীক্ষা করছি, যে সমস্ত বাচ্চার নিউমোনিয়া ইম্প্রুভ করছে না, বারেবারে বাবা-মা আউটডোরে আসছে, তাদের আমরা আরেকটু পরীক্ষা করে দেখতে পাচ্ছি সেখানে সবগুলো বাচ্চারই অ্যাডিনোভাইরাস পজিটিভ।’

তবে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতর না জানার কারণে সরকারিভাবে খুব একটা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশিদা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো সংক্রমণের বিষয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। তবে অ্যাডিনোভাইরাসের বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এক্ষেত্রে যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এমনটা দাবি করা হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই অধিদফতরের জানানো প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বেসরকারি কিছু হাসপাতালে নিজেদের ইন্টারেস্ট থেকেও অনেক কিছু করা হয়। অপ্রয়োজনীয় টেস্টও করা হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি পেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডিজি হেলথে কিছু জানানো হয়নি। যদি জানানো হয় তবে সেক্ষেত্রে আমরা সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবো।’

সরকারি হাসপাতালে শনাক্তের ব্যবস্থা নেই
দেশের একাধিক শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন পরিস্থিতি। ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল বলে পরিচিত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতালসহ রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অ্যাডিনোভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে প্রচুর রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় কারা অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত সেটি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে কোভিডের মতো উপসর্গ নিয়েই রোগীরা হাসপাতালে আসছেন।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের পাশাপাশি অন্যান্য শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও এবার প্রচুর রোগী। এখন এই রোগীরা কিভাবে আক্রান্ত? এরা কী অ্যাডিনোভাইরাস নাকি রাইনো ভাইরাস নাকি রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস নাকি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এটা তো খালি চোখে বোঝা যায় না। আর তাই আইসোলেট করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আইসোলেট করতে গেলে আইইডিসিআর বা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর’বি) থেকে গবেষণার কোনো ফল আছে কিনা তা জানতে হবে। এগুলো নিয়ে তারা গবেষণা করে থাকে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে ল্যাব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাডিনোভাইরাস শনাক্ত করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। আর তাই সেটা করা হচ্ছে না। সরকারিভাবে সেক্ষেত্রে কিট সরবরাহ করা হবে। তখন শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে। কারণ পিসিআর ল্যাব এখন প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই আছে।

সার্ভিল্যান্স জরুরি
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সার্ভিল্যান্সটা খুবই জরুরি। ব্যাপক আকারে সবখানে না হলেও গবেষণার জন্য আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে এই সার্ভিল্যান্সের উদ্যোগ নেওয়ার খুবই জরুরি। তারা যদি গবেষণা করে দেখে যে কোন ভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তখন আমরা সেভাবে আইসোলেট করতে পারি রোগীদের। এক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসা দিতেও সুবিধা হবে।’

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ‘অ্যাডিনো ভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সার্ভিল্যান্স চালানো প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই ভারতের কলকাতায় যেহেতু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তাই আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, বিএসএমএমইউ ও সিএমএইচ- এই চার জায়গায় অ্যাডিনোভাইরাস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউই পরীক্ষা করছে না। আর তাই দ্রুত সার্ভিল্যান্স শুরু করা প্রয়োজন।’

আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে সার্ভিল্যান্স প্রয়োজন যেটা এখন পর্যন্ত নাই। এটা যারা সার্ভিল্যান্স চালু করার সিদ্ধান্ত দিতে পারে তাদের ভাবাটাও প্রয়োজন। একইসঙ্গে সিদ্ধান্তটাও দিতে হবে। নাই নাই করতে থাকলে দেখা যাবে, হঠাৎ করে দেশে অ্যাডিনো ভাইরাস ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। আর তাই অন্যান্য ভাইরাসের মতো অ্যাডিনো ভাইরাসের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা উচিত। কারণ এখন অ্যাডিনোভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আসছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে কলকাতায় হঠাৎ করে যে বাচ্চারা মারা যাচ্ছে তারা কেন মারা গেলো সেটা জানার চেষ্টা করা? তারা কী অ্যাডিনোতেই মারা গেছে নাকি অন্য কোনো কারণে? যদি অ্যাডিনোতেই মারা যায় তবে সেটা কী নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের কারণে? যদি নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট হয়ে থাকে তবে কলকাতায় হতে পারলে তা বাংলাদেশেও হতে পারে।’

সার্ভিল্যান্স করবে কারা?
আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সার্ভিল্যান্স করার দায়িত্ব আইইডিসিআর এর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটার নিজ দায়িত্বে বা সিদ্ধান্তে আলাদাভাবে সার্ভিল্যান্স করতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকারি ভাবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘সার্ভিল্যান্সের ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সঙ্গে একটা খরচের বিষয়ও জড়িত। তবে এই সার্ভিল্যান্সের ক্ষেত্রে খরচ বেশি হওয়ার কথা না। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স ও কোভিডের সার্ভিল্যান্স বিষয়ে একটা নেটওয়ার্ক ইতোমধ্যেই আছে। সেখানে বাচ্চাদের অ্যাডিনো ভাইরাস শনাক্তের জন্য একটা টেস্ট বাড়ালেই চলবে। এটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটা পুরনো ভাইরাস যা মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আইইডিসিআর’র যারা সায়েন্টিফিক অফিসার আছে তাদের পরামর্শ নিয়ে পলিসিমেকাররা সিদ্ধান্ত দিতে পারে। সেই মতামত নিয়ে পলিসি মেকাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা ইনিশিয়েট করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বিষয়টিও থাকতে পারে। আবার বিশ্ব সংস্থার সঙ্গেও কথা বলা যেতে পারে। তাদের দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল যে শাখা আছে সেটা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি’র মতামত নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ নিয়ে সার্ভিল্যান্সটা শুরু করা যেতে পারে।

কী বলছে আইইডিসিআর?
সার্ভিল্যান্স বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। একইভাবে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে না প্রকাশ না করার শর্তে আইইডিসিআর’র এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ ও সার্ভিল্যান্স বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। আর তাই কোও নমুনা পরীক্ষা দূরের কথা, সংগ্রহও করা হয়নি। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে আইইডিসিআর নিয়মিত সার্ভিল্যান্স করে থাকে। আর এই সার্ভিল্যান্সগুলো রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়।

ওয়েবসাইটে কী পাওয়া গেছে?
আইইডিসিআরের ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে গেলে দেখা যায় সেখানে লেখা আছে, ‘Page Not Found.
We cannot seem to find the page you are looking for’। তবে প্রতিষ্ঠানটির পুরাতন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে দেখা যায়, সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সার্ভিল্যান্স রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।

কী বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশিদা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যেসব রিপোর্ট এসেছে তাতে অ্যাডিনোভাইরাস বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এ কারণে আমাদের কোনো কার্যক্রম বা পদক্ষেপ এখনো শুরু হয়নি। তবে আইইডিসিআরের সার্ভিল্যান্স বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য নেই এখন পর্যন্ত। কারণে তেমন কিছু হলে সেটা অবশ্যই জানানো হতো। কোথাও সংক্রমণ পাওয়া গেলে তখন নিশ্চয়ই আমাদের জানানো হতো।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রাশিদা বলেন, ‘আগে থেকে উদ্যোগ নিয়ে লাভ নাই। শনাক্ত হওয়ার পর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এমনিতে আমাদের সেই সক্ষমতা আছে যেখানে যেকোনো রোগের বিষয়েই আমরা সার্ভিল্যান্স করতে পারবো।’

শনাক্ত তবে কে করবে?
ডা. রাশিদা বলেন, ‘এই বিষয় তো রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে আসে। অর্থাৎ কোনো হাসপাতালে পাওয়া গেলে তখন সেটা আমাদের কাছে আসবে। এখন পর্যন্ত কেইস আইডেনটিফাই হয়নি। কেইস আইডেনটিফাই হলে অবশ্যই হবে। চিকিৎসকরা রোগী পেলে অবশ্যই সেটি রিপোর্ট করবে। তারাই তো কেইস ডিটেকশনের জন্য টেস্ট করাবে ও সেক্ষেত্রে শনাক্ত হলে আমাদের জানাবে। এক্ষেত্রে আমাদের ল্যাবগুলোর সক্ষমতা আছে শনাক্ত করার।’

পরিস্থিতি নিয়ে কী বলছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা?
ভারতের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় জানান, শুধু অ্যাডিনোই নয়, সেই সঙ্গে অন্য একাধিক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মিশ্র সংক্রমণও অল্প সময়ের ব্যবধানে দেখা যাচ্ছে। সেই জন্যই অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দ্রুত। চালু করতে হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকও।

শিশু বিশেষজ্ঞ মিহির সরকার জানান, এই ভাইরাসের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দীর্ঘমেয়াদি ছাপ ফুসফুসে পড়ে। এছাড়াও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে খুব ছোট যে সব শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে, সুস্থ হয়ে উঠে ছুটি পাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের একাংশকে ফের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নতুন করে সংক্রমণ আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে।

প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ প্রণবকুমার ভট্টাচার্য অবশ্য অভয় দিচ্ছেন, অধিকাংশ অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণ বাড়িতেই সেরে যায় উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত মাত্র ১.৫৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির দরকার হয়।

তবে করোনাবিধি পালনের মতো মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার পদ্ধতি অ্যাডিনো প্রতিরোধেও অত্যন্ত কার্যকর বলে জানান তিনি।

অ্যাডিনোভাইরাসের লক্ষণ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বেশ কিছু লক্ষণ থাকতে পারে অ্যাডিনোভাইরাসের ক্ষেত্রে। তবে এর মাঝে উল্লেখযোগ্য,

১। বেশি তাপমাত্রায় জ্বর।
২। শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
৩। চোখ লাল হয়ে কঞ্জাকটিভাইটিস হওয়া।
৪। শরীরে অক্সিজেন লেভেল নিচে নেমে যাওয়া।
৫। প্রস্রাব কমে যাওয়া, কখনো প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
৬। ডায়রিয়া।
৭। মাথা ব্যথা, বমি, কাশি ইত্যাদি।

অ্যাডিনোভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায় কী?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অ্যাডিনো ভাইরাস প্রতিরোধে যেসব পরামর্শ দিচ্ছে তার মাঝে অন্যতম হলো-

১) বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোবেন এবং শিশুদেরও এটা অভ্যাস করান।
২) বাইরে থেকে এসে জামা-কাপড় বদল করে এবং হাত ধুয়ে তবে শিশুদের কাছে যাবেন।
৩) ভিড় থেকে শিশুদের দূরে রাখা ভাল। ভিড়বহুল স্থানে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।
৪) কাশি বা হাঁচির সময় রুমাল অথবা নিজের কনুই দিয়ে মুখ ঢাকা দিন। যেখানে সেখানে কফ বা থুতু ফেলবেন না।
৫) যে সব শিশুদের কোনও গুরুতর জন্মগত অসুখ বা অপুষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের বিশেষ সাবধানে রাখতে হবে।

অ্যাডিনোভাইরাস আক্রান্ত হলে কী করণীয়?
করোনার মতোই অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রামক। তাই কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিশেষ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন তা হলো-

১) অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে শিশুদের স্কুলে পাঠাবেন না।
২) বড়দের কারও যদি সংক্রমণ হয় তিনি শিশু, অতিবৃদ্ধ এবং গর্ভবতী মহিলার থেকে দূরে থাকবেন।
৩) প্রতিদিন হালকা গরম নুন-জলে গার্গল করুন। ছোট বাচ্চাদের হালকা গরম জল বা অন্য যে কোনও গরম পানীয় বারে বারে খেতে দিন।
৪) বাসক, আদা, তুলসী, লবঙ্গ কাশি কমায় এবং কফ পাতলা হতে সাহায্য করে। তাই এই সময় কাশি হলে এগুলো খাওয়া যেতে পারে।
৫) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক বা কফ সিরাপ দেবেন না।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

অ্যাডিনো ভাইরাস অ্যান্টিবায়োটিক জ্বরের উপসর্গ

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর