Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনজীবীদের নির্বাচনে বিক্ষোভ, ভাংচুর, পুলিশের লাঠিচার্জ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ মার্চ ২০২৩ ২২:৫৩

ঢাকা: বিক্ষোভ, হামলা-পাল্টা হামলা, ভাংচুর ও পুলিশের লাঠিচার্জের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রথম দিনের নির্বাচন। নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত সাব কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই উত্তপ্ত অবস্থা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।

ভোটগ্রহণের আগে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হট্টগোল-বিক্ষোভের একপর্যায়ে হামলা-ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহণ শুরু করা যায়নি। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের নতুন কমিশন গঠনের জন্য বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা এ সময় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শহীদ শফিউর রহমান অডিটোরিয়ামে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে আইনজীবীদের বের করে দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য আসে। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে।

এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।

এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

আইনজীবীদের পাশাপাশি পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, আজকের পত্রিকার রিপোর্টার এস এম নূর মোহাম্মদ, জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফজলুল হক মৃধা, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মারুফ, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, ডিবিসির ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান মিম ও বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম আহত হন। এদের মধ্যে জাবেদ আক্তারকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের একতরফা ভোটগ্রহণের প্রতিবাদে বেলা ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। তাই ধরেই নেওয়া যায় সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির কোনো ভোট, কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের আইনজীবী ও সাংবাদিক ভাইদের রক্ত ঝরিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে। এটি মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের দাবি।’

মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, ‘সবার মতামত নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তারপর ভোটগ্রহণ করতে হবে। কোনো বানানো ও পাতানো কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে না। এটি আমরা মানব না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি দুটি। এক, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে ভোটগ্রহণ, আরেকটা হলো আইনজীবী ও সাংবাদিকদের যারা মারধর করে আহত করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে বলে জানান মাহবুব উদ্দিন খোকন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোট কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করে এবং সমিতির পাশে ভোটারদের স্লিপ সরবরাহে সহযোগিতা করার জন্য তৈরি করা প্যান্ডেলের ভেতরে বসানো চেয়ার, টেবিল ভাংচুর করে। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ধাওয়া করে পুলিশ এবং কিছু সময়ের জন্য ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা জড়ো হয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে। পরে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

এদিন বিকেলে সমিতির বর্তমান সভাপতি ও আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘গতকাল সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী হামলা করেছে। মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে আইনজীবী কাজলসহ তাদের কিছু সন্ত্রাসী আমাদের কনফারেন্স রুমে হামলা ও ভাংচুর করেছে। ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সকালে হামলা ও ভাংচুর করেছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৮৬০২ জন। প্রথম দিন ২২১৭ ভোট পড়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত সোমবার পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা শুরু হয়। যা আজ হট্টগোল, হামলা, ভাংচুরে রূপ নেয়।

এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে একটি নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে ২০২২-২৪ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

সমিতির কাযর্করী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহ-সভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহ-সম্পাদক পদে দুটি এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে সাতটি পদসহ সর্বমোট ১৪টি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

আইনজীবী সমিতি নির্বাচন পুলিশ লাঠিচার্জ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর