Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের বাড়ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, ঘোষণা ইদের পর

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৫

ঢাকা: আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সঙ্গে বাড়বে গ্যাসের দামও। বিদ্যুতের দাম এবারও ৫ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তা করা হলেও গ্যাসের দাম কি পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে তা এখনও জানা যায়নি। দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা আসতে যাচ্ছে ইদের পরই— এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, ভর্তুকির চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তবে এমনভাবে বাড়ানো হবে যাতে জনগণের ওপরে চাপ না পড়ে, আবার সরকারও ভর্তুকির বোঝা থেকে কিছুটা স্বস্তি পায়।

বিজ্ঞাপন

আরও ৫ শতাংশ বাড়বে বিদ্যুতের দাম
গত দুই মাসে ভোক্তা পর্যায়ে তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ৩৪ক-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার এবং বিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিবিধ সেবার জন্য চার্জ পুনঃনির্ধারণ করা হলো।

নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৫ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে জানুয়ারি মাসে দুই দফায় ১০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয় বিদ্যুতের।

ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারন, পুনর্নির্ধারণ ও সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিধান রয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনে। সে অনুযায়ী যেকোনো সময় দাম সমন্বয়ের ক্ষমতা রাখে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। গত দুই মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে। তখন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘=প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের চিন্তা রয়েছে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে। তবে রমজান সামনে আসায় সে ঘোষণা
আসবে এপ্রিলে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইদের পরে এপ্রিলে আরও ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।

পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার একসময় বিদ্যুতে দশ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতো। এখন জ্বালানির মূল্য বাড়ার কারণে সে ভর্তুকি হয়ে গেছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের তো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারের আরও অগ্রাধিকারমূলক খাত রয়েছে। বিদ্যুতের দাম যাাই হোক, অর্ধেকের কম দামে কৃষকদের বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। এরকম অনেক জায়গা আছে যেখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। এটা অনেক বড় চাপ।’

বিদ্যুতকে ব্যয়বহুল উল্লেখ করে মোহাম্মদ হোসাইন আরও বলেন, ‘কোন অবস্থাতেই বিদ্যুতের অপচয় করা যাবে না। যে ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তা একটু চেষ্টা করলেই ম্যানেজ করে নিতে পারবেন। এতে করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। সরকার একটা ব্যালেন্স করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন বিতরণ সংস্থাগুলো ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ না বাড়ালে তো তারা পিডিবির মতো লোকসানে পড়ে যাবে। এই চিন্তা করেই আরেক দফা বাড়ানো হবে। না বাড়ালে তো সমন্বয় হবে না। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে তাতে কিছুটা গ্যাপ কমেছে। আবার জ্বালানির দামও কমতে শুরু করেছে।’

বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আমদানি করা বিদ্যুৎ বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। অন্যদিকে সিস্টেম লসের নামে চুরি হয় শত কোটি টাকার বিদ্যুৎ। আর এই লোকসান পূরণে সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের ভর্তুকি নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। আর দিনকে দিন বাড়ছে এই ভুর্তুকির বোঝা।

গেল অর্থবছরে যেখানে ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি, সেখানে চলতি অর্থবছরে ৪৪ হাজার ২০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। পিডিবির এই লোকসানের বোঝা কমাতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত বছরের ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে। এরপরই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। ওই আবেদনের ওপরে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করে বিইআরসি। সে ধারবাহিকতায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বাড়বে গ্যাসের দামও
এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিইআরসির এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর চাপ রয়েছে। তবে কি পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে তা এখনও জানা যায়নি।

সূত্র বলছে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো মার্জিন বৃদ্ধির আবেদন করেছে। তবে সংস্থাটির কারিগরি কমিটি বলছে, ইউনিট প্রতি বিদ্যমান ২৫ পয়সা চার্জ কোনো কোম্পানির প্রয়োজনীয়তা নেই। ছয় বিতরণ কোম্পানির মধ্যে শুধু কর্ণফুলী ছাড়া অন্য পাঁচ কোম্পানির মার্জিন বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম দেখিয়েছি পেট্রোবাংলা। সে কারণে গ্যাসের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তি। এই দাম বিবেচনায় নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে জনজীবনে আরও অস্থিরতা নেমে আসবে। পরবর্তীতে গ্যাসের দাম কমানো হলে ভোক্তারা সে সুবিধা পাবেন না। অতীতে এর প্রমাণ রয়েছে জ্বালানির দাম কমলেও গাড়ি ভাড়া কমেনি। তাই অন্তত আরেকটু অপেক্ষা করে বিশ্ববাজার দেখে দাম সমন্বয় করা উচিত হবে।’

উল্লেখ্য, গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল গত বছরের জুনে। গ্রাহক পর্যায় তখন গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিলো ২২.৭৮ শতাংশ। বছর না ঘুরতেই আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোর চলছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে জ্বালানি বিভাগ। বিদ্যুতের মতো গ্যাসের ক্ষেত্রেও নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।

সারাবাংলা/জেআর/ইএইচটি/এমও

ইদের পর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর