Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ প্রবেশের অনুমতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ মার্চ ২০২৩ ১৯:১২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়ে পরিপত্র জারি হয়েছে। ফলে বন্দরে বড় জাহাজ প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত জানুয়ারিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হওয়ার দুই মাস পর এ সিদ্ধান্ত নিল দেশের আমদানি-রফতানি খাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

রোববার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দিয়ে পরিপত্র জারি করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর বন্দরের বোর্ড সদস্যদের সভায় বড় জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৫ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে একটি জাহাজ বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করে। সেটি নির্বিঘ্নে জেটিতে এসে পণ্য খালাস করে ফিরে যায়।

‘পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, জেটিতে এখন ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) প্রবেশে কোনো সমস্যা নেই। যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্তভাবে ওই আয়তনের জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে জোয়ার-ভাটার প্রকৃত সময় নির্ধারণ করে বড় জাহাজ বন্দরের জেটিতে ঢুকতে পারবে’- বলেন বন্দর সচিব।

গত ১৫ জানুয়ারি ব্রাজিল থেকে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৩৬ হাজার মেট্রিকটন চিনি নিয়ে আসা ‘এমভি কমন এটলাস’ নামে একটি জাহাজ বন্দরের চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (সিসিটি) জেটিতে নোঙ্গর করেছিল। জাহাজটি মোট ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন চিনি নিয়ে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে এসেছিল। তখন ড্রাফট ১০ মিটারের বেশি থাকায় ২৪ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন চিনি লাইটারেজ জাহাজে খালাস করা হয়। এরপর ড্রাফট কমলে ৩৬ হাজার টন চিনি নিয়ে বড় জাহাজটিকে জেটিতে ভেড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। পর দিন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যের জাহাজ প্রবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৩৭ মিটার লম্বা এবং সাত মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দেওয়া হতো। সত্তরের দশকে চ্যানেল সংস্কারের পর ১৯৭৫ সালে এই বন্দরে মাত্র সাড়ে সাত মিটার গভীরতা ও ১৬০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো। আরও খননকাজের পর ১৯৮০ সালে ৮ মিটার গভীর ও ১৭০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯০ সালে সাড়ে আট মিটার গভীর ও ১৮০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯৫ সালে ৯ মিটার গভীর ও ১৮৫ মিটার দীর্ঘ এবং ২০১৪ সালে সাড়ে নয় মিটার গভীর ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এর পর আট বছর পর ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু-মাটি অপসারণ করে গভীরতা বাড়ানো হয়। জেটিসহ বন্দর সীমানায় পানির স্বাভাবিক গভীরতা এবং জোয়ারের উচ্চতা হিসেব করে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বড় ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর ওপর সমীক্ষার আগে বিষয়টি চূড়ান্ত করেনি। বৃটিশ প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিংফোর্ড’ সমীক্ষা শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব।

তবে বন্দরের ১৮ জেটির সবগুলোতে একই ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে না। জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বন্দরের হাইড্রোগ্রাফি ও নৌ-বিভাগের কর্মকর্তারা।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে মাত্র ১৮০০ থেকে ২৪০০ কনটেইনার বহনের সুযোগ থাকে। বড়ো ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বর্হিনোঙ্গরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। লাইটারেজ জাহাজ গিয়ে পণ্য খালাস করে জেটিতে আনার পর আবার সেই পণ্য খালাস করতে হয়। রফতানি পণ্যও একই পদ্ধতিতে জাহাজীকরণ করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়।

১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়ানোর পর প্রতিটিতে আরো ১০০০ থেকে ১১০০ কনটেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। এতে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে, কমবে কনটেইনারে করে আনা-নেওয়া করা পণ্যের পরিবহন ব্যয়। এছাড়া ছোটখাট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে জাহাজগুলোকে আর বর্হিনোঙ্গরে অলস বসে থাকতে হবে না।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বর্হিনোঙ্গরে প্রতি বছর চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ আসে। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী, এসব জাহাজে ৩২ লাখ কনটেইনার এবং ১১ কোটি মেট্রিকটন কার্গো পণ্য এসেছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

২০০ মিটার জাহাজ বন্দর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর