২১ মার্চ ১৯৭১: ঢাকায় ভুট্টো, ভাত-পানি বন্ধের হুমকি
২১ মার্চ ২০২৩ ০৯:০২
ঢাকা: ২১ মার্চ ১৯৭১। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণে ঢাকায় আসেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো। বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসার সময় রাস্তার দুই পাশে পথচারীরা ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দেয়।
আগে থেকে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমান দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুট্টো সেদিন কথা বলেননি। হোটেলে পৌঁছে সরাসরি লিফটে চড়েন তিনি। সাংবাদিকরা লিফটে উঠতে চাইলে ভুট্টোর প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশে ভুট্টো বলেন, ‘হঠ যাও, সব কুছ ঠিক হো যায়ে গা।’
সেনাবাহিনীর লোকেরা হোটেল কর্মচারীদের জামায় কালোব্যাজ ও বাংলাদেশের পতাকা খুলে ফেলার জন্য চাপ দেয়। বাঙালি হোটেল কর্মীরা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘সবার ভাত-পানি বন্ধ করে দেব’। অবস্থা বেগতিক দেখে সামরিক কর্তৃপক্ষ কয়েকজন সেনা সদস্যকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।
সন্ধ্যায় পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা পাহারায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে দুই ঘণ্টার বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। কিন্তু ওই বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের কিছু বলা হয়নি।
এর আগে, সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। সেটি ছিল অনির্ধারিত বৈঠক। ৭০ মিনিটের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘আগের বৈঠকের আলোচনায় উদ্ভূত কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য এই বৈঠক।’
এদিন ধানমণ্ডির বাসভবনে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌসুলি এ কে ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসেন বঙ্গবন্ধু।
বিকেলে ধানমণ্ডির বাসভবনে সবমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বুলেট-বেয়নেট দ্বারা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নীতির প্রশ্নে কোনই আপস নাই এবং আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। গুজব ও বিভেদসৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিকেলে চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, ‘আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।’
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাকিস্তান দিবসকে (২৩ মার্চ) প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানায় এবং কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘প্রতিরোধ দিবস’ -এর কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানায়।
মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের এক সমাবেশে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী পণ্য বর্জন সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়।
১৯ মার্চ জয়দেবপুরে যে কারফিউ জারি করা হয়েছিল, তা ছয় ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার কারফিউ জারি করা হয়।
সারাবাংলা/এজেড/এমও