‘ইনসাফ কমিটি’-ই কাল হলো শওকত মাহমুদের
২১ মার্চ ২০২৩ ১৬:২৮
ঢাকা: বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’-তে যাওয়ার কারণেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শওকত মাহমুদকে।
অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠন করে সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে গঠিত ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’র আহ্বায়ক করা হয়েছে কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারকে। সদস্য সচিবের দায়িত্ব নিয়েছেন শওকত মাহমুদ।
সম্প্রতি জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নৈশভোজ করায়। সেখানে সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ ইনসাফ কায়েম কমিটির পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবে বলা হয়— অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠন করে সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করছে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা না গেলে গত কয়েক দশকে গড়ে ওঠা সুবিধাবাদী, সন্ত্রাসী ও লুটেরা শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে না। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় নিশ্চিত না করে তথাকথিত জাতীয় বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রেখে ক্ষমতা লাভের খায়েশমাত্র। তাই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে উৎখাত করে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল ছোট-বড় সব দলকে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’
আরও পড়ুন: শওকত মাহমুদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
ইনসাফ কমিটির ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হচ্ছে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সভা আহ্বান এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করা। নতুন গঠনতন্ত্রে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনি ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য নির্বাচনের সময় সব নির্বাহী ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের পর পরই অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার পদত্যাগ করবে এবং নতুন গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে নতুন জাতীয় নির্বাচন হবে। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে নতুনভাবে বাংলাদেশ গঠনের এটাই সঠিক পথ।’
দলীয় সূত্র মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া বিএনপি ইনসাফ কমিটর এই উদ্যোগকে ভালো মতো নেয়নি। বিএনপি যখন ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে, তখন দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ‘অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবি তুলছেন— বিষয়টিকে ‘চরম বিশৃঙ্খলা’ এবং দলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির ঘোষণা হচ্ছে— তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে তারা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারের ২৭ দফা রূপরেখা দিয়ে কয়েকটি দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যেই ইনসাফ কায়েম কমিটি বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের অভিমত দিয়েছে এবং এর নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপিরই একজন ভাইস চেয়ারম্যান!
ইনসাফ কমিটির নৈশভোজে অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ পুলিশের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা।
দলীয় সূত্র মতে, ইনসাফ কমিটির নৈশভোজে যেসব ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন সময়ের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে রাজনীতি করলেও বিএনপির এদের অনেককেই বিশ্বাস করে না। ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের সঙ্গে এদের অনেকেরই যোগাযোগ ছিল। দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার যে পরিকল্পনা, সেটার সঙ্গে এদের কেউ কেউ যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সুতরাং এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন ও বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’র গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করায় দল থেকে শওকত মাহমুদকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সোমবার (২০ মার্চ) অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে।’
ইনসাফ কামিটিতে যাওয়ার কাণেই কি শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি একটি যৌথ সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে আলাদাভাবে কিছু বলার নেই।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম