Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রস্তাবিত জায়গা ‘দখলমুক্ত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ মার্চ ২০২৩ ১৮:০২

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করেছে জেলা প্রশাসন। তিন শতাধিক অবৈধ বসতঘর উচ্ছেদ করে প্রায় পাঁচ একর জায়গা চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের গোয়াছি বাগান এলাকায় শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযান দুপুর পর্যন্ত চলে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা এতে নেতৃত্ব দেন।

বিজ্ঞাপন

চীনের অর্থায়নে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১৫০ শয্যার প্রস্তাবিত এই ইউনিটে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টি আইসিইউ, ২৫টি এইচডিইউ ও ২টি অপারেশন থিয়েটার থাকবে।

চট্টেশ্বরী রোডের গোয়াছি বাগান এলাকায় চমেক হাসপাতালের স্থায়ী-অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কিছু কর্মচারীর বসতঘর ছিল, যারা দীর্ঘসময় ধরে বংশ পরম্পরায় হাসপাতালের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। চমেকের প্রধান ছাত্রাবাস সংলগ্ন হাসপাতালের জায়গায় তারা নিজেরাই ঘর বানিয়ে থাকতেন। বেআইনি হলেও হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকায় তাদের এতদিন সরানো হয়নি।

বার্ন ইউনিট নির্মাণের জন্য সেই স্থানটি নির্ধারণের পর গত ১ মার্চ বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরে যাবার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানিয়েছেন, ২০ মার্চের মধ্যে তাদের সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। অন্যথায় ২১ মার্চ থেকে উচ্ছেদ অভিযানের বিষয় তাদের জানানো হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। এসময় অনেককে আসবাব পত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে দেখা যায়। অনেকে দীর্ঘদিনের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে কাঁদতে থাকেন। কেউ কেউ প্রতিবাদের চেষ্টা করেন।

উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দারা বলছেন, পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাদের কপাল পুড়ে দিল চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাজু পাল সারাবাংলাকে বলেন, ’২০ তারিখের মধ্যে আমাদের চলে যেতে বলেছিল। আমরা বললাম, মাসের মাঝখানে আমরা কোথায় যাব? ১ তারিখ থেকে আমরা চলে যাব। তারা সেটি মানেনি। আমার দাদু মারা গেছে এখানে, আমার বাবার জন্ম হয়েছে এখানে। আমরা দাদুর আমল থেকে হাসপাতালে কাজ করে আসছি। আমরা এখানে ফ্রি থাকি না, বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল সব দিই।’

‘করোনা গেল, আমরা করোনা রোগীদের নিয়ে যুদ্ধ করেছি। আমরা তাদের সেবা দিয়েছি। আমাদের অনেক লোক করোনায় মারা গেছে। ডাক্তাররা তো তখন হাসপাতালেও আসেনি। পরিচালক তখন কোথায় ছিল? রোহিঙ্গারা যদি থাকার জন্য জায়গা, বাড়িঘর পায়, তাহলে আমরা পাব না কেন?’

সজল পাল নামে আরেক কর্মচারী বলেন, ‘আমরা পরিচালকের কাছে গিয়ে বলেছিলাম, রমজানের মধ্যে নতুন বাসা খুঁজে সেখানে ওঠা আমাদের জন্য কঠিন হবে। সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে, আমরা যে টাকা ইনকাম করি, তা দিয়ে তো চলতে পারব না। আমাদের কয়েকটা দিন সময় দিতে বলেছিলাম। একঘণ্টা সময়ও না দিয়ে আমাদের এতদিনের ঘরদুয়ার সব ভেঙে দিয়েছে।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উচ্ছেদ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন যে, তাদের নাকি সময় দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তাদের ২০ মার্চের মধ্যে অবৈধ বসতঘরগুলো ছেড়ে চলে যেতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর গতকাল (সোমবার) মৌখিকভাবে বাসিন্দাদের আজকের উচ্ছেদ অভিযানের বিষয় জানানো হয়েছিল।’

এরপরও কয়েকটি পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাদের একদিন সময় দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তিন শতাধিক অবৈধ ঘর উচ্ছেদ করে ৫ একর জায়গা দখলমুক্ত করেছি। এটির পুরোটাই হাসপাতালের জায়গা, আমরা তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। ২-৩টি পরিবার অনুরোধ করেছে যে, তারা একদিন পর নিজেরাই চলে যাবে। আমরা মানবিক বিবেচনায় তাদের অনুরোধ রেখেছি। যদি সরে না যায়, তাহলে কাল (বুধবার) আবার এসে উচ্ছেদ করব।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

চমেক হাসপাতাল জায়গা দখল বার্ন ইউনিট

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর