Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উপজেলায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনওর দায়িত্ব অবৈধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৪

হাইকোর্ট

ঢাকা: উপজেলা পরিষদে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে ইউএনওদের দায়িত্ব পালন অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে উপজেলা প্রশাসনের পরিবর্তে উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে।

আইনজীবীরা বলেছেন, এ রায়ের ফলে উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের একছত্র কর্তৃত্ব থাকছে না। এর ফলে তাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এবং তাদের ক্ষমতাও কিছুটা কমে গেল।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৯ মার্চ) এ সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে পৃথক দু’টি রিটের পক্ষে ছিলেন, জেষ্ঠ্য আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও মো. মিনহাদুজ্জামান লীটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

রায়ের পর আইনজীবী মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায়ে আদালত কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো- উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা এর ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন’ এই অংশটুকু অবৈধ এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হবে।

উপজেলা পরিষদে যে কমিটিগুলো হবে তা উপজেলা পরিষদ আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী হতে হবে। যেখানে উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করা হতো সেখানে উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ এখন থেকে সব জায়গায় উপজেলা পরিষদ নাম ব্যবহার করতে হবে। উপজেলা পরিষদের অর্থনৈতিকসহ সকল কার্যক্রমের জবাবদিহিতা উপজেলা পরিষদের কাছে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ইউএনওদের জবাবদিহিতা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তবে এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সারাবাংলাকে বলেছেন,‘ ইউএনওরা উপজেলা আগেও উপজেলা পরিষদে সাচিবিক সহায়তা দিয়েছেন। এখনও দিয়ে যাবেন। তবে আজকের রায়ের ফলে ইউএনওরা উপজেলা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’

‘এর বাইরে সরকারি অর্থে পরিচালিত উপজেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি পদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তবে উপজেলা পরিষদের অর্থে পরিচালিত কমিটিগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এর ফলে সরকারি অর্থে পরিচালিত উপজেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি পদে ইউএনওরা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আর উপজেলা প্রশাসনের নাম সরকার আগেই সার্কুলার দিয়ে পরিবর্তন করে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা পরিষদে কাউকে একছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কার কী দায়িত্ব তা উপজেলা পরিষদ আইনে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। এখানে কোন ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই।’

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্টদের কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে—‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’ ৩৩-এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে—‘পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।’

এর আগে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার বাদী হয়ে ওই রিট করেন।

এরপর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেছিলেন।

রুলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সাচিবিক দায়িত্ব পালনের বিধানসংবলিত আইনের ৩৩ ধারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি ইউএনওরা বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখে থাকেন, এটাও কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং বিভিন্ন কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি এবং চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করতে জারি করা পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার সচিবসহ ১৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। আজ ওই রুল আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

ইউএনও হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর