Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুত-সারের দাম বাড়াচ্ছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:০৪

ঢাকা: আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত, গুম ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ছাত্র দলের নিখোঁজ নেতা নুরুল আলম নুরু, নুরুজ্জামান জনি, মাহমুদুর রহমান বাপ্পী, পারভেজ রেজা, তরিকুল ইসলাম তারা, মো. সোহেল, মফিজুল ইসলাম রাশেদ, জাকির হোসেন, জাকির হোসেন মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাওসার, জাসাসের আমিরুল ইসলাম মিন্টুর পরিবারের সদস্যদের হাতে ‍উপহার তুলে দেন বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আবার সারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, কৃষকদের কষ্ট হবে কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে এটা মেনে নিতে হবে।’

‘কোন উন্নয়ন, কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন হচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর উন্নয়ন। আজকে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে বাংলাদেশে। একদিকে সেই বিশাল বিশাল অংকের মালিক, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট করে বিদেশে পাচার করছে এবং বাড়ি-ঘর কিনছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষেরা দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। তাও তারা পুরোপুরি পাচ্ছে না। কারণ, জিনিসপত্রের দাম তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে কমপক্ষে ৭ শ’র উপরে আছেন যারা গুম হয়ে গেছেন, সহাস্রাধিক গণতান্ত্রিক কর্মী আছেন যারা খুন হয়ে গেছেন। একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে গত ১৪/১৫ বছর ধরে। এখানে কিছুক্ষণ আগে একজন বলেছেন, ১০/১১ বছর তারা তাদের পিতাকে, ভাইকে দেখেন না। আমরা প্রতিবছর এভাবে চেষ্টা করি তাদেরকে এই কথাটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, আমরা তাদের ভুলে যাইনি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। এখানে উপহারের ব্যাপারটা একেবারেই গৌণ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এই অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন করেই তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। আজকে সমগ্র দেশ একটা বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছে। আপনি খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা-খুন-গুম চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষে একেবারে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য, নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য এসব করা হচ্ছে।’

‘এই গুম কথাটা আগে বাংলাদেশের মানুষ জানত না। এটা ল্যাটিন আমেরিকায় আমরা শুনেছি যে, এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স, তুলে নিয়ে গিয়ে নাই করে দেওয়া। এটা বাংলাদেশে নতুন করে আওয়ামী লীগ ইন্ট্রিডিউজ করেছে। যদিও আমাদের মনে আছে, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখনও এরকম গুমের অনেক ঘটনা ঘটেছিল, প্রকাশ্যে ঘটেছে, এভাবে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের গঠনটাই এরকম। একদিকে সন্ত্রাস আরেকদিকে দুর্নীতি। এই দুটার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এভাবে গুম-খুন হয়ে, নির্যাতিত হয়ে আর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে না। মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। আপনারা জানেন, আরও ১৭জন যুক্ত হয়েছে তারা প্রকাশ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। এই রক্তস্রোত ও বাচ্চাদের কান্না কখনও বৃথা যেতে পারে না।বিজয় আমাদের হবেই্, আমরা অবশ্যই নির্যাতকারীদের, ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। গুম হওয়া পরিবারের এই ছোট্ট মেয়ের কান্না সেই কান্নাকে সঙ্গে নিয়ে সেটাকে ক্রোধে পরিণত করে আমাদেরকে অবশ্যই এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে ফেলতে হবে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নির্মাণ করতে হবে। যেখানে এই ধরনের গুমের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, যেখানে মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে স্বাধীনভাবে থাকতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘আসুন, এই বেদনাবিদুর অনুষ্ঠান থেকে আমরা শপথ নেই ভবিষ্যতে যেন আমাদের কোনো মেয়েকে কাঁদতে না হয় যে, সে তার বাবাকে দেখতে পাচ্ছে না ১০ বছর ধরে, এই কথা যেন তার বলতে না হয়। আমার স্বামীকে পাইনি, এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ছাত্রদলের নিখোঁজন নেতা মাহমুদুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর ও সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার সাফা।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য শাম্মী আখতার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, যুব দলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, নাজমুল আহসান, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার প্রমুখ।

সারাবাংলা/ এজেড/ এনইউ

আইএমএফ মির্জা ফখরুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর