বাংলা একাডেমিতে নববর্ষ উদযাপন, চলছে মেলা
১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৫০
ঢাকা: নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে বাংলা একাডেমি। শুক্রবার (১ লা বৈশাখ) সকাল ৮ টায় একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে নববর্ষ বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি।
শিল্পী মহাদেব ঘোষের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রবি-রশ্মি’র শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত এবং বর্ষবরণের রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা রচিত ‘মঙ্গলপ্রভাতে যাত্রা’ কবিতা পাঠ করেন বাচিকশিল্পী এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলা বর্ষবরণে বৈশাখী মেলা শীর্ষক নববর্ষ বক্তৃতা প্রদান করেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল জলিল।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। আলোচনায় অংশ নেন- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সচিব কবি আসাদুল্লাহ্। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘নববর্ষ আমাদের বাঙালির জাতিত্বজ্ঞাপক উৎসব। সংস্কৃতির শক্তিতে আমরা রাজনৈতিক মহাযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। স্বাধীনতাকে সকল মানুষের জন্য অর্থবহ করতে সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন, নববর্ষ উৎসব যে জাগরণের অন্যতম বীজবিন্দু।’
অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল জলিল বলেন, ‘অনাদিকালের বর্ষপরিক্রমায় বাংলার অন্যতম মাস বৈশাখ। এই মাসের বহুমত্রিক পরিচয় বাংলার লোককবিদের মানসলোকে, ইতিহাসের সোনালি পাতায়, উৎসবের অলিন্দে, নান্দনিকতার গৌরবে শুধু অপূর্ব নয়, অসামান্য। এছাড়া ঋতুবৈচিত্র্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও গ্রীষ্মের প্রথম মাস বৈশাখের গুরুত্ব গৌরবোজ্জ্বল। বাংলার মাটি ও মানুষ স্বভাব-নৈকট্যে ঘনিষ্ঠতর। কোমলে-কঠোর, ভাঙা-গড়ায়, আবর্তন-বিবতনে, উত্থান-পতনের সাযুজ্যে যা স্পষ্টতর।’
মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলা নববর্ষ উৎসব অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক পর্ব। আমরা রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বর্ণদুয়ারে উপনীত হয়েছি। নববর্ষ উৎসব স্বাধীন বাংলাদেশের এবং বিশ্ববাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। নববর্ষ উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের শেকড়ের সন্ধান করি এবং বৈশাখের পথ বেয়ে আলোকিত আগামীর পানে যাত্রা করি।’
কবি আসাদুল্লাহ্ বলেন, ‘বাংলা নববর্ষে আমাদের প্রত্যয় হোক অন্ধকার থেকে আলোক-অভিমুখে সোচ্চার অভিযাত্রা।’
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাঙালি তার নববর্ষ উৎসবকে শত শত বছর ধরে নানা বৈশিষ্ট্যে ও বৈচিত্র্যে পালন করে আসছে। এ উৎসব আমাদের বাঙালিত্ব ও জাতিসত্তার চেতনাকে পুষ্ট করে চলেছে। বাঙালির সৌন্দর্যবোধ, স্বকীয়তা ও সংগ্রামের উপাদানে সমৃদ্ধ বাংলা নববর্ষ উৎসব বাঙালিত্বের বিকাশকে অব্যাহত রেখেছে।’
শিল্পী মানিক রহমানের পরিচালনায় বাংলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে বর্ষবরণের সমকালীন সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।
বইয়ের আড়ং এবং বৈশাখী মেলা
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণে বিশেষ ছাড়ে বইয়ের আড়ং চলছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়েছে। ২৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ থেকে শুরু হওয়া এ বৈশাখী মেলা চলবে ৭ বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম