ঈদে চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ জলহস্তি ও জেব্রার নতুন শাবক
২১ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫১ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০৮
ঢাকা: চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনি কিংবা রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই জাতীয় চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদে কিংবা যেকোনো উৎসবে রাজধানীবাসীর বিনোদনের অন্যতম সেরা পছন্দের স্থান এই চিড়িয়াখানা। এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দর্শনার্থীদের বিনোদন দেওয়ার অপেক্ষা রয়েছে সদ্য জলহস্তি আর জেব্রার ঘরে জন্ম দেওয়া দুই নতুন অতিথি। এছাড়া বছরজুড়ে চিড়িয়াখানা জন্ম হওয়া অসংখ্য হরিণ শাবক দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দেবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
অন্যদিকে, চিড়িয়াখানা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্প্রতি আনা পেলিকেন্ট, লামা, ক্যাগারু ও আফ্রিকান সিংহের ছোটাছুটি দর্শনার্থীদের বাড়তি মনের খোরাক জোগাবে। বুধবার (১৯ এপ্রিল) দিনভর চিড়িয়াখানায় ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবার ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ঢল নামবে। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় পরিদর্শনে আসার প্রত্যাশা করছেন কর্তৃপক্ষ। আর এটি সাধারণ সময়ের চেয়ে ৯/১০ গুণ বেশি হয়। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন গড়ে চিড়িয়াখানা ১২ থেকে ১৫ হাজার রোক প্রবেশ করে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই সংখ্যা বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজারে উন্নীত হয়। আর দুই ঈদে তা লাখ ছাড়িযে যায়।
এসব দর্শনার্থীদের বরণ করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সেজন্য ঈদ উপলক্ষে চিড়িয়াখানায় আসায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বাড়তি দর্শানার্থী যাতে নির্বিঘ্নে চিড়িয়াখানা প্রবেশ ও বের হতে পারে সেজন্য কিউ পথের সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রশস্ত করা হচ্ছে। একইসময়ে ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানা দেখতে আসা লাখো দর্শনার্থী যাতে পশুপাখিকে বিরক্ত করতে না পারে তার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চিড়িয়াখানাকে নতুনভাবে সাজাতে এবং দর্শনার্থীদের কাঙ্ক্ষিত বিনোদন দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় নেদারল্যান্ডস থেকে চারটা লামা, তিনটা পেনিক্যাল, লাল রংয়ের দুইটি ক্যাঙ্গারু আনা হয়েছে। এছাড়া অফ্রিকা থেকে সিংহ ও উইল্ডিবিস্ট আনা হয়েছে।
প্রাণিগুলো আনার পর গত বছর ঈদুল আজহা হলেও সবগুলো প্রাণি ঠিকমতো প্রদর্শন করা হয়নি। ফলে এবার ঈদে এসব প্রাণি দর্শনার্থীদের জন্য অনেকটাই নতুন আকর্ষণ।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন চিড়িয়াখানায় ১২ থেকে ১৫ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেন। তবে ছুটির দিনে এই সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার হয়ে থাকে। আর ঈদে এই সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত হবে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় এসে নতুন কিছু প্রাণী দেখতে পাবেন, সেগুলো হলো- পেলিকেন্ট, লামা, ক্যাগারু, বয়েল ডিভিস ও আফ্রিকান সিংহ, এই প্রার্ণীগুলো এসেছে। এছাড়াও দু’টি জেব্রার বাচ্চা দিয়েছে, জলহস্তিও বাচ্চা দিয়েছে। পাশাপাশি হরিণ নিয়মিত বাচ্চা দিচ্ছে। অনেকগুলো হরিণের ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ঈদে দর্শনার্থীর ঢল নামাকে কেন্দ্র করে আমরা আমরা দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রথমত তাদের নিরাপত্তা এবং তাদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা। নিরাপত্তার জন্য আমরা দর্শনার্থীদের প্রবেশ পথে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সেজন্য কিউ বড় করে দিয়েছি। পাশাপাশি প্রধান ফটকের একটা পার্ট দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য খুলে দেওয়া হবে। এটা ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ব্যবস্থা। এছাড়া দর্শনার্থীরা যাতে চিড়িয়াখানার ভেতরে নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারে, তাদের জানমালের ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য চিড়িয়াখানাকে সুসজ্জিত করেছি। আমাদের প্রাণীগুলোকে পরিচর্ষা করেছি, যাতে তারা পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারে। পাশাপাশি চিড়িয়াখানাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বিনোদন, দুর্লভ ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, শিক্ষা, গবেষণা প্রাণিবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুর ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬.৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৩টি প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৮টি।
সারাবাংলা/জিএস/এমও