ঈদের দ্বিতীয় দিন চিড়িয়াখানায় ২ লাখ দর্শনার্থী
২৩ এপ্রিল ২০২৩ ২০:১৯
ঢাকা: ঈদের দ্বিতীয় দিন জাতীয় চিড়িয়াখানা স্রোতের বেগে প্রবেশ করেছে প্রায় দুই লাখ দর্শনার্থী। প্রতিটি প্রবেশ গেইটে দীর্ঘ লাইন ধরে সকাল ৯টা থেকে দর্শনার্থী প্রবেশ শুরু করে। তবে সকাল ৮টা থেকেই তারা চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। সকাল ১০টায় পুরো চিড়িয়াখানা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। প্রতিটি খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে পছন্দের পশু-পাখিকে দেখার জন্য রীতি মতো যুদ্ধ করতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, বানর, ক্যাগারু, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ুরের খাচাঁয় দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
রোববার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে চিড়িয়াখানার প্রবেশ গেইট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মিরপুর কর্মাস কলেজ মোড় থেকেই গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেখান থেকে দর্শানার্থীদের প্রায় এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে হয়েছে। চিড়িয়াখানার গেইট থেকে কমার্স কলেজের মোড় পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ক্লান্তিকর অবস্থায় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলেও তাদের চোখে-মুখে ছিল আন্দনের আভা।
জানা গেছে, এবার দর্শনার্থীদের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জলহস্তি আর জেব্রার ঘরে জন্ম নেওয়া নতুন দুই অতিথি। আর বছরজুড়ে চিড়িয়াখানা জন্ম হওয়া অসংখ্যা হরিণ শাবক দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। পাশাপাশি চিড়িয়াখানায় সম্প্রতি আনা পেলিকেন্ট, লামা, ক্যাগারু ও আফ্রিকান সিংহের ছুটাছুটি দর্শনার্থীদের মনে বাড়তি খোরাক জুগিয়েছে। এছাড়া বাঘ, হাতি, চিতা, উল্লুকের খাঁচাগুলোর সামনে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। পাশাপাশি চিড়িয়াখানার পার্কে শিশুদের ট্রেনে ভ্রমণ, বিভিন্ন দোলনায় চড়া চিল বাড়তি আনন্দ।
এ ব্যাপারে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন চিড়িয়াখানায় এক লাখের কাছাকাছি দর্শনার্থী প্রবেশ করলেও আজ তা দুই লাখে উন্নীত হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যাক দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা প্রবেশ করে শান্তিপুর্ণভাবে পশুপাশি দেখছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। পার্কিং এলাকায় যাতে কোনো ধরনের জটলা না হয় সেজন্য কিউ সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তা বড় করা হয়েছে।’
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমরা সুস্থ বিনোধনের পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদারেও জোর দিয়েছি। চিড়িয়াখানার ভেতরে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে। এছাড়াও আনসার এবং আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী কাজ করছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীরা যাতে প্রাণীদেরকে বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য আমাদের কর্মীরা খেয়াল রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ব্যবস্থা এবং সাময়িক বিশ্রামের জন্য ছাউনি রাখা রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে এবার ঈদে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীরা আগের চেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন।’
রাজধানীর খিলগাঁও থেকে সপরিবারে চিড়িয়াখানায় এসেছেন মো. জাফর আহমেদ। সরাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়র বয়স ছয় বছর। তাকে পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সপরিবারে চিড়িয়াখানা এসেছি। মেয়ে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে বেশ আনন্দ পাচ্ছে।’
গেন্ডারিয়া থেকে চিড়িয়াখানায় আসা শারমিন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি, বাচ্চারা বেশ মজা পাচ্ছে। তবে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় খাঁচার কাছাকাছি গিয়েও প্রাণীগুলোকে দেখাতে পারছি না। এটা ভিড়ের কারণে হচ্ছে।’ অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পবিবেশ ভালো, আগের মতো হকারদের কোনো উৎপাত নেই। কোনো সমস্যা হয়নি।’
উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৩ প্রজাতির ৩ হাজার ৩৩৮টি প্রাণী রয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম