ডানা মেলতে চাইলে মেটাতে হবে ৩৫০ কোটি টাকা পাওনা
২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:০৯
ঢাকা: ফের ডানা মেলতে চায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স লিমিটেড। ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে এয়ারলাইন্সটির কার্যক্রম প্রায় সাত বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ইউনাইটেড এয়ারের আটটি বিমান দীর্ঘ দিন ধরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পড়ে আছে। ফলে এই সাত বছরে বিমানগুলোর পার্কিং ও অন্যান্য চার্জ বাবদ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। ফের কার্যক্রম শুরু চাইলে আগে সিভিল এভিয়েশনের এই পাওনা পরিশোধ করতে হবে এয়ারলাইন্সটিকে।
এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স যদি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় তাহলে আগে তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। বকেয়া পরিশোধ ছাড়া কার্যক্রম চালু সম্ভব নয়। ইউনাইটেড এয়ার প্রথম পরিকল্পনা হিসেবে কার্গো সার্ভিস পরিচালনা করতে চায়। এরপর ধীরে ধীরে তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে চায়। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পরে অর্থমন্ত্রণালয় তাদের সেই প্রস্তাবে নারাজি দিয়েছে।’
যদিও এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই/তিনটা ব্যবসার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা ইনভেস্টমেন্ট পেলে কী করব, আর বাইরের ইনভেস্টমেন্ট যদি আসে তাহলে কী করব; এমনকি ইনভেস্টমেন্ট না পেলে কী করব- সেটাও আমরা বলেছি। এখন সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা সেভাবে কাজ করব। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ভালো কিছু করার। সেই চেষ্টায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘১ লাখ ৭০ হাজার সাধারণ শেয়ার হোল্ডার রয়েছে আমাদের। এরাই কিন্তু এই এয়ারলাইন্সটির মালিক। সরকার যদি এই শেয়ার হোল্ডারদের দিকে তাকিয়ে একটু সুযোগ দেয় তাহলে ভালো হয়। আর না দিলে কিছুই বলার নেই। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। ফের যদি এয়ারলাইন্সটি চালু হয় তাহলে শেয়ার হোল্ডাররা তাদের লভ্যাংশ পাবে, সরকারও বকেয়া পাবে। আমরা উড়তে চাই। ফের কার্যক্রম চালু করতে চাই।’
২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সটির কাছে ওই সময় ১০টি উড়োজাহাজ ছিল। এর মধ্যে একটি ভারতে এবং অন্য একটি পাকিস্তানে। আর বাকি আটটি রয়েছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ধূলো, বালি, ঝড়, বৃষ্টিতে পরিত্যক্তভাবে পড়ে থাকতে থাকতে উড়োজাহাজগুলোর অধিকাংশ যন্ত্রাংশ ও কাঠামো নষ্ট হওয়ার পথে। এই উড়োজাহাজগুলো মেরামত করে উড়ানোর চেয়ে সেই অর্থ দিয়ে বরং নতুন ব্মিানই কেনা যাবে।
সিভিল এভিয়েশনের হিসাব মতে, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাছে মূল বকেয়া রয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। বাকি বকেয়া সার চার্জ হিসেবে একীভূত। এদিকে, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ১২টি বিমান সম্প্রতি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তখন সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য সমাধানে সিভিল এভিয়েশনকে চিঠিও দেয় ইউনাইটেড এয়ার।
বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা, এয়ার অ্যাস্ট্রা এবং নভোএয়ার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অপরদিকে, রাজস্ব শূন্যের কোটায় চলে আসায় ২০২০ সালের মার্চ থেকে তিন মাস কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় আরেক বেসরকারি এয়ারলাইন্স রিজেন্ট। ওই সময় এয়ারলাইন্সটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ নানা সংকটের কথা জানান। কিন্তু ইমরান নতুন এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যাস্ট্রাতে যোগ দিলে রিজেন্ট আর ফ্লাইট অপারেশনে আসতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে দেশে ব্যবসা শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। ২০০৫ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১০ জুলাই সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম