ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রটিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যায়িত করে পাল্টা ভিডিও
২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫১
ঢাকা: দেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে জার্মানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে। তথ্যচিত্রটিতে র্যাবকে একটি ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে দাবি করা হয়। ২৯ মিনিটের তথ্যচিত্রে মোট ৬ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
তবে ডয়েচে ভেলের এই তথ্যচিত্রটিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যায়িত করে পাল্টা আরেকটি ৪১ মিনিটের ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছেন ব্যারিস্টার ও সলিসিটর নিঝুম মজুমদার। ‘ডয়েচে ভেলে, একটি মিথ্যার আদ্যোপান্ত’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া তার ভিডিওচিত্রে উঠে আসে ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রটির পেছনের আরেকটি গল্প। যে গল্পে খোদ ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য, মান ও বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের কথিত দুই কমান্ডারের স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিঝুম মজুমদার। এটিকে তিনি ‘হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে দুই অভিনেতার মঞ্চাভিনয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই দুই চরিত্রকে ভুয়া প্রমাণ করতে নিঝুম মজুমদার তিন জন সামরিক বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছেন।
ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রে ২০১৯ সালে কক্সবাজারের টেকনাফে নিহত হওয়া একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যচিত্রে একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগমের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তথ্যচিত্রটিতে বলা হয়েছে, একরামুল হক হত্যাকাণ্ড প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হয়েছে বলে দাবি করেছেন আয়েশা বেগম। তবে নিঝুম মজুমদারের ভিডিওতে একরামুল হকের স্ত্রী ও স্বজনরা দাবি করেছেন, তাদের বক্তব্য ভুলভাবে পুরোপুরি পাল্টিয়ে ব্যবহার করেছে ডয়েচে ভেলে।
নিঝুম মজুমদারের ভিডিওতে দেখা যায়, একরামুল হকের স্ত্রী ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বলছেন, ‘আমার অনেক খারাপ লাগছে, এটি দুঃখজনক। আমি যেটা বলি নাই সেটা বলা হইছে।’
ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে তার কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম। নিঝুম মজুমদারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক আরাফাত তাকে বলেছেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর থেকে অর্ডার নিয়ে আসছি। প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের অনেক ভালোবাসেন। প্রধানমন্ত্রীর নামে আমরা অনেক কিছু লিখি। তিনি অনেক ভালোমানুষ। তিনি দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।’
নিঝুম মজুমদারের ভিডিওতে একরামুল হকের স্ত্রী ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রটির বিষয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বামী হত্যা নিয়ে তারা এরকম করবে ভাবতেও পারি না।’
নিঝুম মজুমদার তার ভিডিওতে একরামুল হকের দুই ভাইয়েরও বক্তব্য নিয়েছেন। একরামুল হকের মেঝো ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পরিবার পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামী লীগ।’
একরামুল হকের ছোট ভাই এহতেশামুল হক বাহাদুর সেদিন ভোরে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ করেন বলে দাবি করেছেন। ভোরে কী উদ্দেশে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকরা তাদের বাড়িতে এসেছেন— সে প্রশ্ন করেন তিনি। জবাবে ডয়েচে ভেলের সাংবাদিকরা তাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের পারমিশন নিয়ে এখানে এসেছি।’
একরামুল হকের স্ত্রীর সাক্ষাৎকারের বিষয়ে এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘উনি (একরামুল হকের স্ত্রী) যা বলছে উনার বিপরীতেই বক্তব্য দিয়েছে এটা (ডয়েচে ভেল)।’
নিঝুম মজুমদার তার ভিডিওতে প্রশ্ন তোলেন— ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রে ভুক্তভোগী হিসেবে যাদের দাবি করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা হলেও একরামুল হকের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। একরামুল হক আওয়ামী লীগ করতেন বলেই তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বলে দাবি করেন নিঝুম মজুমদার।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে নাফিজ মো. আলম নামের এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই তথ্যচিত্রে র্যাবের হাতে আটকের পর তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তবে ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রে নাফিজ মো. আলমের কোনো পেশাগত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
নিঝুম মজুমদার তার ভিডিওতে দাবি করেন, নাফিজ মো. আলমের নানা অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তিনি রাজধানীর উত্তরার অপরাধ চক্রের একজন শীর্ষ সদস্য। ২০১৭ সালে উত্তরায় কিশোর আদনান কবীর হত্যাকাণ্ডের আসামি এই নাফিজ মো. আলম। তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে একজন মদ বিক্রেতা হিসেবে দাবি করেন। নিজ বাসা থেকে তিনি রাজধানীতে মদের ব্যবসা পরিচালনা করেন। শুধু তাই নয়, নাফিজ মো. আলম নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তা গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করেন। তিনি পর্ন বানিয়ে মেয়েদের নানা অপকর্মে বাধ্য করেন।
নিঝুম মজুমদার দাবি করেন, নাফিজ মো. আলম নানা সময় নিজেকে র্যাব বা পুলিশের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে বেড়ান।
নাফিজ মো. আলমের বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। ২০২১ সালে অভিযান চালিয়ে নাফিজ মো. আলমের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে প্রায় দেড়শ জন নারীকে ফাঁদে ফেলে গোপনে ধারণ করা ভিডিও জব্দ করা হয়। তার দাবির পক্ষে ভিডিওতে বেশ কিছু ভিডিও ও নথি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন নিঝুম মজুমদার।
তিনি দাবি করেন, নাফিজ মো. আলমের অপরাধের এই রেকর্ড ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রটি তৈরিতে সহায়তা করেছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজ- যার পরিচালনায় রয়েছেন সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল। নেত্র নিউজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ডেভিড বার্গম্যান। বিতর্কিত ডেভিড বার্গম্যান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করে আসছেন।
নেত্র নিউজের পৃষ্ঠপোষকতা কারা করছে ও তাদের উদ্দেশ্য কী— সে বিষয়টিও তার ভিডিওতে খোলাসা করেছেন নিঝুম মজুমদার। ভিডিওচিত্রে তিনি জানান, নেত্র নিউজের অর্থায়ন আসে ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) নামক একটি সংস্থা থেকে, যা নেত্র নিউজের ওয়েবসাইটেই উল্লেখ রয়েছে। এনইডি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র একটি অঙ্গ সংগঠন।
নিঝুম মজুমদারের দাবি, যে সব দেশে সিআইএ সরাসরি কাজ করে না সেসব দেশে মার্কিন স্বার্থে কাজ করে এই ‘এনইডি’।
সারাবাংলা/আইই/রমু