পুলিশের বাসায় আগুনে জান্নাতের মৃত্যু, তদন্ত চায় গণতন্ত্রী পার্টি
৪ মে ২০২৩ ১৮:৫৪
ঢাকা: রাজধানীর শান্তিনগরে পুলিশের ওয়ারী জোনের এডিসি মোহাম্মদ আলাউদ্দীনের বাসায় আগুনে পুড়ে গৃহকর্মী জান্নাতের (১৩) মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছে গণতন্ত্রী পার্টি।
গণতন্ত্রী পার্টির দফতর সম্পাদক মিনহাজ সেলিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার (৪ মে) এই দাবি জানানো হয়েছে।
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জান্নাতের মৃত্যুর ঘটনায় অনেক তথ্য জানতে দেওয়া হচ্ছে না। অদৃশ্য চাপে গণমাধ্যমে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে না। আমরা মনে করছি, প্রকৃত ঘটনা নিয়ে লুকোচুরি চলছে। কীভাবে একজন গৃহকর্মী ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়ে মারা গেল সে বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। এতেই ওই ঘটনার বিষয়ে নানা সন্দেহ দানাবাঁধার অবকাশ তৈরি হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম.এ গনি বলেন, ‘ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় কী ঘটেছিল তার উপযুক্ত তদন্ত হতে হবে। এভাবে কোনো গৃহকর্মীর মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। গৃহকর্মী জান্নাতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে দায়ী সবার দৃষ্টান্তমূলক সাজা হতে হবে।’
ঢাকায় কাজে আসার ৫০ দিনের মাথায় লাশ হতে হয় গৃহকর্মী জান্নাতকে। ঈদের আগে ১৭ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জান্নাতের মৃত্যু হয়। তার শ্বাসনালি, কণ্ঠনালিসহ শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায় আগুনে। ফলে কোনো চিকিৎসা আর কাজে লাগেনি।
শান্তিনগরে ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. আলাউদ্দীনের বাসায় ১৬ এপ্রিল পুড়ে যায় গৃহকর্মী জান্নাত। ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার জানিয়েছে, ঘটনার দিন দুপুরে গরম পানি করার সময় ওড়নায় আগুন লাগার ফলে জান্নাত দগ্ধ হয়।
কিন্তু কীভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটল, তপ্ত দুপুরে আদৌও গরম পানির দরকার ছিল কি না? ওই সময় বাসায় কার কী ভূমিকা ছিল— তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
মৃত্যুর আগে গৃহকর্মী জান্নাত জানিয়েছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর হাতে প্রায়ই মারধরের শিকার হত সে। এমনকি ঘটনার দিন প্লেট ভেঙে যাওয়ার অপরাধে তাকে বেদম মারধর করা হয়।
এর আগে, ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার দিবসে গণতন্ত্রী পার্টির আলোচনা সভার ব্যানারে গৃহকর্মী জান্নাতের পোড়া দেহের ছবি ছাপানো হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাহমুদুর রহমান বাবু। আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কানন আরা, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রকৌশলী কামরুল আহসান খান পারভেজ, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ সেলিম, ঢাকা মহানগর সহ সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কে.জি মহিউদ্দিন বাদল, আতাউর রহমান বাবুল, ইলিয়াস কবির রানা, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম জামান, ইদ্রিস আলী মোল্লা, অপু কুমার দেবনাথ, এস.এম মামুন, নওগাঁ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ড. নাজমুল করিম, ঢাকা মহানগর নেতা শফিকুর রহমান, হাসিনা বেগম, মহাজন প্রমুখ।
সভায় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, সমতাভিত্তিক, মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা, ব্যাংক লুটপাটকারী, শেয়ার কেলেংকারী, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, অসাধু ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান।
প্রধান আলোচক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাহমুদুর রহমান বাবু বলেন, ‘৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে শিকাগো’র হে মার্কেটে আত্মদানকৃত শ্রমিকদের অবদানের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
এ সময় মালিক-শ্রমিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে তিনি আহ্বান জানান।
সারাবাংলা/একে