‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের পরিস্থিতি অনুকূলে’
৫ মে ২০২৩ ২৩:৩৯
কক্সবাজার: কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমারের মংডু শহরের আশে-পাশে পরিদর্শনকালে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি দেখা গেছে। ওখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, ব্যবসা করা মানুষের ৮০ শতাংশ’ই রোহিঙ্গা। সেখানকার প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।
শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যায় এমন তথ্য জানান আরআরআরসি। প্রত্যাবাসনের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ২০ প্রতিনিধিসহ সাত সদস্যের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিদল এদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় মিয়ানমার যান। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় তারা ফিরে আসেন।
ফিরে এসে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারের একটি দল দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ওই সময় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হবে।’
এদিকে, প্রতিনিধি দলে থাকা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পালিয়ে আসার সময় যে গ্রাম রেখে এসেছিলেন তার কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে এখন সারিবদ্ধ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
আবু সুফিয়ান নামে রোহিঙ্গা নেতা জানান, মংডু শহরের আশেপাশে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন তারা। ওখানে গ্রামের কোনো অস্তিত্ব নেই। সবকিছু পাল্টে গেছে। তবে সারি সারি ক্যাম্প তৈরি করেছে। এসব ক্যাম্পেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার।
মোহাম্মদ সেলিম নামে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি নিজেই কথা বলেছেন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানালেও তাকে জানানো হয়েছে আপাততে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এনভিসি কার্ডে তাদের ক্যাম্পে থাকতে হবে। মিয়ানমারের এমন শর্তে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন না সেলিম।
রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে তিন জন নারী ও ১৭ জন পুরুষ ছিলেন। তারা টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা।
এদিকে, আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা যাছাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৯ সালে অগাস্টে চীনের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়নি। এখন আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের তরফ থেকে এই তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেওয়া হলো।
সারাবাংলা/পিটিএম