মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পর্যটন বিকাশে মেহেরপুর ঘিরে ‘মাস্টারপ্ল্যান’
৭ মে ২০২৩ ১০:১৯
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে মেহেরপুরকে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে মেহেরপুর জেলাকে গড়তে তৈরি হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। এ বিষয়ে ‘মেহেরপুর জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে এই প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদফতর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার চেয়ার ও টেবিলের মূল্য প্রতিসেট এক লাখ ৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। এ হিসেবে ৬ সেটের ধরা হয়েছে। এছাড়া সাপোটিং স্টাফের জন্য একটি টেবিল ও ২টি চেয়ারের মূল্য ৮০ হাজার টাকা হিসেবে ৫ সেট এর ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব ব্যয় পুনঃপরীক্ষা করে যৌক্তিকভাবে কমানো দরকার বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া আরও অন্য ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন আছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত বছরের ১২ জুন ডিও’র মাধ্যমে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন নিজের নির্বাচনী এলাকা মেহেরপুর জেলার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য কিছু বিষয় উল্লেখ করে চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলায় সরকারের মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করে বাংলাদেশকে পাক হানাদার বাহিনীর দখল ও শোষণ থেকে মুক্ত করে। ফলে এদেশের মানচিত্রে মেহেরপুর জেলার অবদান অপরিসীম। উন্নয়নবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এজন্য মুজিবনগরকেন্দ্রীক ওই এলাকার পর্যটন বিকাশের সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের সম্প্রসারণ বা সংস্কারসহ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র, রেল সংযোগ, রাস্তা সম্প্রসারণ, স্থলবন্দর ও চেকপোষ্ট, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবিশন সেন্টার,বিশ্ববিদ্যালয়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মডেল মসজিদ স্থাপন ইত্যাদি উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান।
মেহেরপুর জেলা মাত্র তিনটি উপজেলার মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর এবং গাংনী) নিয়ে গঠিত। মেহেরপুর জেলার মোট আয়তন ৭৫১.৬২ বর্গকিলোমিটার। মুজিবনগরসহ মেহেরপুর জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদনের জন্য মেহেরপুর জেলার মাস্টারপ্ল্যান তৈরি অত্যন্ত জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়, ফিজিক্যাল ফিচার জরিপ, আর্থ-সামাজিক জরিপ, সাব-সার্ফেস জিও টেকনিক্যাল স্টাডি, ট্রান্সপোর্টেশন জরীপ, বিদ্যমান প্রাণী ও উদ্ভিদের বেজলাইন জরিপ এবং হাইড্রো-জিওলজিক্যাল জরিপ পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এনভায়রনমেন্টাল জরীপ এবং কম্পিউটার ইক্যুইপমেন্ট ও সার্ভে ইক্যুইপমেন্ট কেনাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত হিসেবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬টি কম্পিউটার ও ৩টি ল্যাপটপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের সবাই অতিরিক্ত দায়িত্বে কাজ করবেন। এছাড়া এর আগেও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কেনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ সংখ্যা সভায় আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এছাড়া, বিভিন্ন কমিটির সম্মানী ভাতা ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ টাকা রাখা যেতে পারে। ওয়েব ডিজাইন, জিআইএস ম্যাপ হোস্টিং অ্যান্ড মেইনটেনেন্স ব্যয় ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকাও বেশি, এটি ১০ লাখ টাকা রাখা যেতে পারে। এসব পরামর্শকের ক্ষেত্রে জুনিয়র ও সিনিয়র মিলিয়ে ১১ জন পরামর্শকের সংস্থান রাখা হয়েছে। জুনিয়রদের বেতন এক লাখ টাকা এবং সিনিয়রদের বেতন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসাবে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় আলোচনার মাধ্যমে এ খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, পিরোজপুর জেলার ৩টি উপজেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতাও ৩টি উপজেলা রয়েছে। বিভিন্ন জরিপের ক্ষেত্রে ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। আরও আছে রিপোর্ট প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং বাবদ ১৬ লাখ টাকা এবং মৌজায় প্লট নাম্বারের ওপর ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার প্রস্তাবনা সিডিউল বই প্রস্তুতে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে বলে সভায় মত দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও