Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেষযাত্রায় সঙ্গী সেই লাল-সবুজের পতাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ মে ২০২৩ ২৩:০০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হাজারো সহযোদ্ধার শোক, শ্রদ্ধা আর সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র। যে লাল-সবুজের পতাকার জন্য একদিন নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে, শেষযাত্রায় সেই পতাকাই ঢেকে রেখেছিল তার মরদেহ।

রোববার (৭ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নেওয়া হয় অমল মিত্রের মরদেহ। এর আগ থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে ভিড় জমান। শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য ছুটে যান সাধারণ মানুষও। সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মশিউর রহমান, চসিক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু, ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্তসহ অসংখ্য নেতাকর্মী শেষযাত্রায় শরীক হন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সাংসদ এম এ লতিফের পক্ষেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নগর আওয়ামী লীগ, দলের বিভিন্ন থানা কমিটি এবং নগর যুবলীগ, নগর ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বোধন আবৃত্তি পরিষদ, উদীচী, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অমল দা একটি ইতিহাসের অংশ। ছাত্রজীবনেই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত হয়ে ছাত্রলীগে যোগ দেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেছেন। কোনো লোভ-লালসা তার মধ্যে ছিল না। যারা এখনকার রাজনৈতিক কর্মী, তাদের জন্য তিনি আদর্শ হয়ে থাকবেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এমপি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘অমল মিত্র ছিলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অসম সাহসী এক যোদ্ধা। খুব কম বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ যোদ্ধা অসংখ্য সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। গভীর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সৈনিক হিসেবে নায়কোচিত ভূমিকা পলন করেন। তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে দল ও দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’

এদিকে, জাতির এই বীর সেনানীকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামিউল হিকমা রাষ্ট্রের পক্ষে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। পুলিশের একটি চৌকস দল এ সময় গার্ড অব অনার দেয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শেষকৃত্যের উদ্দেশে অমল মিত্রের মরদেহ নগরীর বলুয়ার দিঘী মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

৭২ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র রোববার (৭ মে) বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে নগরীর মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও ছায়াসঙ্গী অমল মিত্র চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। একাত্তরে সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। সাহসী গেরিলা হিসেবে অমল মিত্র ছিলেন পাক সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের আতংক।

ভারতে গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রায় দেড় মাস প্রশিক্ষণ শেষে একাত্তরের আগস্টে তিনি দেশে ফিরে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম শহরের আইস ফ্যাক্টরি রোডে সিটি কলেজের সামনে গেরিলা অপারেশনে অমল মিত্রের ভূমিকা স্থান পেয়েছে ইতিহাসধর্মী বিভিন্ন গ্রন্থে। আগ্রাবাদে মেজর পদমর্যাদার এক পাক সেনা কর্মকর্তাকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অপারেশনের খরচ জোগাতে আগ্রাবাদে আমেরিকান এক্সপ্রেসে অভিযান চালিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিশোধ নিতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক কর্মী অস্ত্র হাতে নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন অমল মিত্র তাদের একজন।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

অমল মিত্র টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর