Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে হাতিরঝিল ভরাট বন্ধের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২৩ ২৩:০৪

ঢাকা: রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় হাতিরঝিলের একাংশ ভরাট ও পান্থকুঞ্জ পার্ক নষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা রাজধানী ঢাকার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যত দ্রুত সম্ভব এসব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (১৩ মে) ‘হাতিরঝিল, পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং সংলগ্ন এলাকার ওপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনাগত প্রভাব: আইপিডি’র পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক জুম আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে যা জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আইন, পরিকল্পনা ও যথাযথ পদ্ধতির তোয়াক্কা না করে হাতিরঝিলের জলাধার ভরাট করছে। এ ছাড়াও পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ ছাড়াই নতুন করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা হাতিরঝিল প্রকল্পের সার্বিক লক্ষ্য ও উপযোগিতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)’র পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাসমূহের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় না করেই এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন র‍্যাম্প নির্মাণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো ধরনের পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ ছাড়াই নতুন করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যেই এক্সটেনশন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা হাতিরঝিল প্রকল্পকে ধ্বংস করবে।’

বিজ্ঞাপন

‘হাতিরঝিলে প্রস্তাবিত ৪১ টি পিলার প্রকল্প এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জলাধারের পানিপ্রবাহ ও সার্বিক উপযোগিতা ধ্বংস করবে। জলাধার ভরাটের উদ্যোগ জলাধার সংরক্ষণ আইন ও বিভিন পরিকল্পনার সুস্পষ্ট লংঘন। পৃথিবীর উন্নত ও আধুনিক শহরগুলো নগর এলাকায় ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমস্যা সমাধানের কৌশল থেকে সরে এসেছে। অথচ আমরা এখন পরিবহন সমস্যার সমাধান কৌশল হিসেবে নগর এলাকায় ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমাধান পরিকল্পনা করে যাচ্ছি, যা ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করে। পরিবহন-ভূমি ব্যবহারের পারস্পরিক সম্পর্কজনিত প্রভাব বিশ্লেষণ না করেই অধিকাংশ পরিবহন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারণে হাতিরঝিলের জলাধার বালু ফেলে ভরাট ও প্রকল্প সম্প্রসারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনে নাগরিকদের প্রদেয় ৪৬৯টি মতামত আইপিডি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, হাতিরঝিল জলাধার ভরাট ও প্রকল্প সম্প্রসারণ বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে শতকরা ৭১ ভাগ, ইতিবাচক ১৩ ভাগ, নিরপেক্ষ ৩ ভাগ ও অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য ১৩ ভাগ।

অনুষ্ঠানে আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ১৯৫৩ সালের টাউন ইম্প্রুভমেন্ট আইন অনুসারে রাজউকের অনুমতি ছাড়া কিংবা ডিটিসিএ’র সমন্বয় ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সে প্রশ্ন তোলেন। পরিবেশ ও নগর এলাকাকে ধ্বংস করে এ ধরনের প্রকল্পের সাথে যে সকল পেশাজীবী ও কর্মকর্তা যুক্ত থাকেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

আইপিডি’র পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে যোগাযোগ ও পরিবহন অবকাঠামোর ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হয়। সেটিকে বৈধ করার জন্য সমীক্ষা বা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ব্যক্তিগত গাড়িতে যেই ৫ শতাংশ লোক চলাচল করেন, তাদের জন্য বড় বড় মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয়; অথচ তার কুফল ভোগ করেন বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ।’

অনুষ্ঠানে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার ফুসফুস হাতিরঝিলকে মেরে ফেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের ৪১টি পিলার যেন হাতিরঝিলের বুকে ৪১টি পেরেক ঠুকবার আয়োজন। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার অন্যতম কম তাপীয় এলাকা হাতিরঝিলের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে অনেকাংশে।’

আইপিডি’র পক্ষ থেকে পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রস্তাবনাগুলো হলো:

— এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে জলাধার ভরাটের বিদ্যমান উদ্যোগ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা ও ইতিমধ্যে জলাধার ভরাটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন, পরিকল্পনা, যথাযথ সংস্থার অনুমতি ও পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তদন্তের মাধ্যমে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।

— হাতিরঝিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত ৪১ টি পিলার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

— পান্থকুঞ্জ পার্ককে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা ও দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং হাতিরঝিল থেকে পলাশী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত ফ্লাইওভার লিংক তৈরির প্রস্তাবনা বাতিল করা।

— এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট ও র‍্যাম্পের অবস্থান নির্ধারণে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনে সকল অংশীদারদের মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

— ঢাকার অন্যান্য পরিবহন ও ভৌত পরিকল্পনার সঙ্গে এই পরিকল্পনার কার্যকর ও টেকসই সমন্বয় সাধনের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রভৃতি।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

এক্সপ্রেস এলিভেটেড হাতিরঝিল

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর