উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, সংকেত নেমে ৩ নম্বরে
১৪ মে ২০২৩ ২২:২১
ঢাকা: অতি প্রবল ঘুর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। পরিস্থিতি ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় কক্সবাজার উপকূল থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৪ মে) রাতে আবহাওয়া অধিদফতর তাদের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার (১৪ মে ) সন্ধ্যা ৬ টায় উপকূল অতিক্রম করেছে এবং দূর্বল হয়ে সিটওয়ে মিয়ানমারে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরো উত্তর উত্তর দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ (তিন) নম্বর (পুনঃ) ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ (তিন) নম্বর (পুনঃ), ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ (তিন) নম্বর (পুনঃ) ৩ (তিন) স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে।
জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা সহনীয়: ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ‘সহনীয়’ ছিল জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেছেন, এই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।
গত পাঁচ বছরে যতগুলো দুর্যোগ মোকাবিলা করা হয়েছে, এবারের ব্যবস্থাপনাটি সর্বোচ্চ সঠিক ছিল বলে দাবি করেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী।
রোববার (১৪ মে) সচিবালয়ে তার দফতরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন,‘সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ঝড়টি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অতিক্রম করছে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে ঝড়ের গতিবেগ এখনও ২০০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার। এ গতিবেগে কেন্দ্রটি উপকূল অতিক্রম করলে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হবে।’
ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ না পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারে ৫৭৬টি কেন্দ্রে ২ লাখের বেশি, চট্টগ্রামে ১ হাজার ২৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, সুবর্ণচরের মানুষকেও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানি না থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের একটি কেন্দ্রে সুপেয় পানি ছিল না। আমি অভিযোগ পেয়ে সেখানকার জেলা প্রশাসককে বলেছি। সেখানে তিনি পর্যাপ্ত মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এবার আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আমরা তাদের মিনারেল ওয়াটার খাওয়াব, সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যায় যা করেছিলাম, যেন দুর্যোগের পর সেখানে পানিবাহিত কোনো রোগ না হয়।’
দুর্যোগকালীন লাখ লাখ মানুষের ব্যবস্থাপনা সহজ নয় জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘হাজার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র, লক্ষ লক্ষ মানুষ। এদের ব্যবস্থাপনা বাস্তবিক অর্থে এত সহজ না। আমরা দেখেছি এর আগেও সক্ষমতা ১০০ জনের হলেও ২০০ মানুষ আসে। তাদের খাওয়া-দাওয়া, স্যানিটেশনের ব্যবস্থা খুব সহজ নয়।’
তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাজের প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী।
সারাবাংলা/জেআর/একে