জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হবে: প্রধানমন্ত্রী
২৪ মে ২০২৩ ১৮:৫৫
ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হবে এবং তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৪ মে) দোহার র্যাফলস হোটেলে কাতার ইকোনোমিক ফোরামে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাতার ইকোনোমিক ফোরামের এডিটর অ্যাট লার্জ হাসলিন্ডা আমিন। সঞ্চালক এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অর্থনীতি-রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী তার জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে-পরে অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও এই ‘কথোপকথন’ হয় এবং আলাদা আলাদা সঞ্চালকরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হাসলিন্ডার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের অধীনে নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশের সব নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তখন নির্বাচন শুধু একটা খেলা ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নত দেশ হওয়া উচিত। সেটিই আমার লক্ষ্য। জনগণের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি, কেন আমি সেটা নষ্ট করবো। অবশ্যই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।’ সূত্র: বাসস।
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) স্বাচ্ছন্দ্য বোধ নাও করতে পারে। কিন্তু অন্য অনেক দল আছে, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিছু দল আছে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারা কিভাবে অংশগ্রহণ করবে? কারণ তাদের আমলে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমাদের জনগণ কষ্ট পেয়েছে। তাদের সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। দেশের সর্বত্রই ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং শোষণ। তারা কখনো মানুষকে নিয়ে ভাবেনি। আমাদের জনগণের দিনে এক বেলা খাবার পাওয়া ছিল খুব কঠিন। এই ছিল তখন দেশের পরিস্থিতি।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জনগণের সবকিছু নিশ্চিত করেছে। তাই এখন নির্বাচন, এটা জনগণের অধিকার। আমরা জনগণের জন্য কী করেছি মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে। তারা যদি আমাদের ভোট দেয় আমি এখানে আছি, যদি না দেয়, ঠিক আছে।’
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে তার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা এবং পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসার কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তখন থেকে আমরা গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার পুনুরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম শুরু করি। এটা ছিল আমাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার সংগ্রাম এবং আমরা এটি করেছি।’
বিএনপিকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। কী ছিল সেই নির্বাচনের ফলাফল। যে দলটি (বিএনপি) প্রশ্ন তোলে তাদের দল, তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দল মিলে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল।’
শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে জানান, তিনি এখানে আছে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। কারণ জনগণেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কে দেশ পরিচালনা করবে। ‘এটি (ভোট) জনগণের শক্তি, আমি জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই। আমি এখানে ক্ষমতা দখল করার জন্য নয় বরং আমি আমাদের জনগণের ক্ষমতায়ন চাই, তাদের সরকার তারাই বেছে নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন উপনির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে অনেক উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আপনি দেখতে পারেন, কারা সমস্যা তৈরি করছে, আমরা নয়। তবে প্রত্যেক নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে।’
সরকার সবাইকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং আমি আপনাকে বলতে পারি, আমি এখানে আছি আমার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং এটা আমাদের সংগ্রাম। তিনি ক্ষমতায় আছেন দেশের সেবা করতে এবং জনগণের সেবা করতে। যাতে তারা অধিকতর ভালো ও সমৃদ্ধ জীবন পায়।’
এসময় বিএনপিকে একটি অপরাধী ও খুনিদের দল হিসেবে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
সাম্প্রতিক আইএমএফে’র লোন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা লোন পরিশোধ করতে পারে আইএমএফ শুধু তাদের লোন দেয়। কোন দেশ লোন পরিশোধ করতে পারবে কি পারবে না, সেটা বিবেচনা করে আইএমএফ সে দেশকে লোন দেয়। বাংলাদেশ অবশ্যই লোন পরিশোধে সক্ষম।’
সারাবাংলা/এনআর/এমও