Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিদেশপ্রেমিক ডাকাতের খপ্পড়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ মে ২০২৩ ২২:১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রতিহতের আহ্বান এসেছে এক গোলটেবিল আলোচনা থেকে। আলোচনায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, বন্দর বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়া হলে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।

শুক্রবার (২৬ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুলতান আহমদ হলে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় এ বক্তব্য এসেছে। ‘বেসরকারি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে ‘প্রগতির যাত্রী’ নামে একটি সংগঠন।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে নাকি বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কী অদ্ভূত যুক্তি! তাহলে দেশের ভেতরে যেসব বিশৃঙ্খলা চলছে, দেশ পরিচালনার জন্যও কি বিদেশিদের নিয়ে আসতে হবে?’

‘চট্টগ্রাম বন্দর শুধু একটি বন্দর নয়। এর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব জড়িত। এমন একটি স্থাপনা যারা বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চান, তারা আর যা’ই হোক দেশপ্রেমিক নয়। একসময় আমরা দেশপ্রেমিক বিদেশি ডাকাতের খপ্পড়ে পড়েছিলাম। তারা বাংলা থেকে ধনসম্পদ লুট করে নিজের দেশে নিয়ে যেত অর্থাৎ তারা নিজের দেশপ্রেমিক। আর এখন আমরা বিদেশপ্রেমিক দেশিয় ডাকাতদের খপ্পড়ে পড়েছি। তারা দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে নিয়ে যায়।’

‘ইচ্ছে করে ঘরের চাবি পরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে’ মন্তব্য করে রতন বলেন, ‘এখন বলছে দু’টি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়ার কথা। আস্তে আস্তে পুরো বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। তখন বিদেশ থেকে আর স্যাংশন দিতে হবে না, এই বিদেশি অপারেটররাই স্যাংশন দিয়ে দেবে। এই বিদেশিরা যদি তেলের জাহাজ তারা একমাস অপারেট না করে, ভোগ্যপণ্যের জাহাজ সাগরে ভাসিয়ে রাখে, তাহলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে ভাবতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘সময় গেলে সাধন হবে না। সময়ের মধ্যেই প্রতিবাদ করতে হবে। স্বেচ্ছায় লুণ্ঠন মেনে নেওয়া যাবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম, এখন জ্বালানি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে, বন্দরে যারা বিদেশি অপারেটর নিয়ে আসছে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বন্দরটা নির্দিষ্ট একটা শ্রেণির হাতে জিম্মি হয়ে গেছে ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে। এখানে টার্মিনাল ও বার্থ নির্দিষ্ট অপারেটর দিয়ে বছরের পর বছর অপারেট করা হচ্ছে। নতুন কেউ যদি কাজ করতে চায়, এমনভাবে অভিজ্ঞতার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, যাতে তারা অংশ নিতে না পারে। নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে অভিজ্ঞতা আসবে কোথা থেকে? এভাবে বন্দরকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। কারণ এখানে প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই।’

‘বলছি না, বাইরের কেউ আসুক। বলছি দক্ষতা বাড়াতে হবে। কিন্তু প্রতিযোগিতার সুযোগ না থাকলে দক্ষতা বাড়বে কিভাবে? দেশিয় অপারেটরদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, বাইরের অপারেটর নিয়ে আসা তোড়জোড় হচ্ছে। বন্দর নিজেরা করছে না কেন? তারা বড় বড় অফডক কেন করছে না? এত বড় বড় মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে, বন্দরের সব গেইটে স্ক্যানার কেন বসানো হচ্ছে না?’

জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বন্দর বিদেশি অপারেটরের হাতে দিতে চাচ্ছে, সেটার মধ্যে সদিচ্ছা দেখছি না। যে সক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে, সেই সক্ষমতা নিজেদের বৃদ্ধি করে না কেন? গোলটেবিল বৈঠকে না থেকে মাঠের আন্দোলনে নামতে হবে। তেল গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা কমিটির আগের মতো কার্যক্রম নেই। এটাকে আবার শক্তিশালী করে মাঠে নামতে হবে। দেশের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমেরিকার এস এস এ কোম্পানিকে যখন বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা আন্দোলন করেছিলাম। রক্ষা করেছিলাম সেদিন বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়েই বাংলাদেশের অর্থনীতি। রাজনৈতিক কারণে, অর্থনৈতিক ফায়দার জন্য বন্দরকে নিয়ে ব্যবসা করা হলে সেটা সুখকর হবে না। চট্টগ্রামের নাগরিক হিসেবে বন্দরকে দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘দেশের আমলারা আত্মপ্রেমী হয়ে গেছে। দেশের সম্পদ বিক্রি করে নিজেদের পকেট গোছানোর কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে ৩০ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়। করোনাকালেও কোনো প্রভাব পড়েনি। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবার বন্দরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের পোর্টকে ব্যবহার করার জন্য আমেরিকা, ভারত, রাশিয়া সবাই চেষ্টা করছে। এসব নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’

প্রগতির যাত্রীর সংগঠক নুপুর ধরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গবেষক-সংগঠক প্রকাশ ঘোষ। আলোচনায় আরও অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রামের সভাপতি তপন দত্ত, সাংবাদিক জসিম চৌধুরী সবুজ, হাসান আকবর ও নাজিমউদ্দিন শ্যামল, সংগঠক উৎপল দত্ত, শিক্ষক হোসাইন কবীর।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বন্দর টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর