Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২৩ ১৭:১০

ঢাকা: আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শতকরা বিবেচনায় এই বরাদ্দ মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ছিল। অর্থাৎ প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় এই প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মানসম্মত ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে কোভিডকালে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট হতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সংগ্রহ ও তার ব্যবস্থাপনা, দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন ক্রয় ও প্রয়োগ করেছি। জনগণকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রদানে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম ৫ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে।’

কোভিড পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ-

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১৬টি জাতীয় গাইডলাইন, অন্যান্য নির্দেশিকা, ৪টি এসওপি (অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং প্রসিডিউর) এবং ১৩টি গণসচেতনতামূলক উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১২ হাজার ৮৬০টি শয্যা এবং ১ হাজার ১৮৬টি আইসিইউর সংস্থান করা হয়েছে। দেশের সকল জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে কমপক্ষে ৫টি শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। মোবাইল ফোনে কোভিড-১৯ এর সেবা প্রদান ও স্বাস্থ্য বাতায়নসহ অন্যান্য হটলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। সারাদেশে ১৬২টি পরীক্ষাগারে আরটিপিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। এছাড়াও ৫৭টি জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে এবং ৬৬৬টি কোভিড-১৯ র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট সেন্টারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টেস্ট করা হচ্ছে।’

সবার জন্য সুলভ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো— অগ্রাধিকারভিত্তিক সেবাসমূহ সম্প্রসারণ, অধিক সংখ্যায় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ ও সেবাগ্রহীতার ব্যক্তিগত ব্যয় হ্রাস করা। এক কথায় আর্থিক কষ্ট ব্যতিরেকেই সকল নাগরিকের জন্য গুণগত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা চতুর্থ স্বাস্থ্য, ও পুষ্টিখাত কর্মসূচির আওতায় ৩১টি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধযোগ্য রোগসমূহ হতে শিশুদের সুরক্ষা দিতে চলমান রাখা হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। ১৯৮৫ সালে ইপিআই কভারেজ ছিল মাত্র ২ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ১০৬টি উপজেলায় মাল্টিপারপাস হেলথ (এমএইচভি) কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। দরিদ্র জন্য পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্যসুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় টাঙ্গাইল জেলার ১১টি আন্তঃবিভাগীয় রোগীদের (স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি) বেনিফিট প্যাকেজের অধীনে ৭৮টি নির্ধারিত রোগের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।’

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গ্রামীণ জনগণের কাছে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কার্যকর মাধ্যম হিসেবে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়। ক্লিনিকের জন্য জমি প্রদানের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায়ও ভূমিকা রাখেন। ক্লিনিক পরিচালনা ও ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব সরকারের। ক্লিনিকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা ছাড়াও পুষ্টিসেবা প্রদান করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অনুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা পয়সায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ জন সেবাপ্রার্থী সেবা গ্রহণ করে থাকেন, যার ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবসেবা দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, দায়বদ্ধতা এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের উদ্ভাসিত আলোয় ২০৪১ সালের মাঝে সম্পূর্ণ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার অন্তর-মন-প্রোথিত ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামমলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।

আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর