গ্রাহকের ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যাংককর্মীর যাবজ্জীবন
১ জুন ২০২৩ ২২:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো : গ্রাহকের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এক কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। এছাড়া পৃথক বিভিন্ন ধারায় তাকে আরও ২৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই রায়ে আদালত অর্থ আত্মসাতের সহযোগী হিসেবে দুই ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু।
দণ্ডিত তিনজন হলেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের চান্দগাঁও শাখার সাবেক প্রায়োরিটি ব্যবস্থাপক মো. ইফতেখারুল কবির এবং নগরীর মাদারবাড়ির জুলেখা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মাবুদ ও হালিশহরের লাবিবা ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী জাকির হোসেন বাপ্পী।
আদালত ইফতেখারুল কবিরকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন ৩০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধারায় তাকে আরও ২৪ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৭ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, ৪৬৭ ধারায় দেয়া সাজা পর্যায়ক্রমে চলবে। যাবজ্জীবনসহ বাকি সাজা একসাথে কার্যকর হবে।
আদালত আব্দুল মাবুদকে মোট ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ৮৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৮০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দেড় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার প্রতিটিতে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সব সাজা একসাথে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
আদালত আসামি জাকির হোসেন বাপ্পীকে মোট ৬ বছর, ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৩০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার প্রতিটিতে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সব সাজা একসাথে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আসামি জাকিরের স্ত্রী লাবিবা বুটিকসের স্বত্ত্বাধিকারী ফারজানা হোসেন ফেন্সীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে জানান, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চের মধ্যে কয়েক দফায় এক কোটি ৯২ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। দুই গ্রাহকের আমানতের টাকা তাদের হিসাব নম্বরে জমা না করে ভূয়া সীল-স্বাক্ষর ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে আব্দুল মাবুদ ও জাকির হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে এই টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
ইস্টার্ন ব্যাংকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর তৎকালীন উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার আদালত এ রায় দিয়েছেন।
দুদকের আইনজীবী জানান, কারাগারে থাকা তিন আসামিকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পরে সাজামূলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/একে