Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একাধিক গাড়ির করকে স্বাগত, তবে…

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৩ ০৮:২৮

ঢাকা: আগামী অর্থবছর থেকে একের অধিক গাড়ি থাকলেই মালিকদের বাড়তি কর দিতে হবে। ‘কার্বন কর’ নামে নতুন এ কর একাধিক গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসের ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, কার্বন নিঃসরণ কমাতে ও পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সরকার কার্বন কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে কার্বন কর পাস হলে দেড় হাজার সিসির গাড়ির মালিকদের একই ইঞ্জিনের দ্বিতীয় ও পরের সব গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা করে কর দিতে হবে। দেড় হাজার থেকে ২ হাজার সিসির গাড়ির জন্য এই কর হবে ৫০ হাজার টাকা। ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে এই কর হবে ৭৫ হাজার টাকা। ৩ হাজার সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে ২ লাখ ও সাড়ে ৩ হাজার সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ টাকা কর দিতে হবে।

এই ‘কার্বন কর’ আরোপের সিদ্ধান্তে পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা বলছেন মাথায় রাখতে হবে আরও কিছু বিষয়।

কয়েক বছর ধরেই বায়ু দূষণে টানা শীর্ষে থাকে রাজধানী ঢাকা। এর অন্যতম কারণ গাড়ির কালো ধোঁয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও কার্বন কর যুক্ত করায় সন্তুষ্টি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা। তবে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর কর আরোপ করে কার্বন নিঃসরণে কতখানি ভূমিকা রাখবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। একাধিক গাড়ির ওপর করারোপ করলে তা ট্যাক্স ফাঁকিদেওয়াসহ, অন্যান্য দুর্নীতিতে উৎসাহ দেবে কিনা তাও ভেবে দেখার আহ্বান তাদের।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বিশ্বের নানা দেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্বন কর আরোপ করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডে গাড়ি চলার রাস্তা সরু করে সাইকেলের লেন বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ির উপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না করলে এটি কোন কাজে লাগবে না। দেখা যাবে মানুষ অন্যনামে গাড়ি কিনবে, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার উপায় বের করবে। তাই সবার আগে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে ও শহরটাকে পথচারীবান্ধব করতে হবে। এক সমীক্ষায় দেখে গেছে ঢাকায় ৭০ শতাংশ মানুষ পাঁচ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে থাকে। এসব ব্যক্তির হেঁটে চলাচলের জন্য উন্নতমানের ফুটপাতের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ডিন ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কার্বন ট্যাক্সকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কয়েকটা জায়গায় আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দেশে ৫২ লাখ গাড়ি আছে যার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি ধরলে এটি দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ। আর ২০ লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলের উপর কিন্তু কার্বন কর ধরা হয়নি, ধরা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির উপর যেখানে এসব গাড়ির ফিটনেসই সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে গণপরিবহন আছে ৫ থেকে ৬ লাখ। পরিবেশ অধিদফতর ও বিআরটিএ’র ২০১৯ সালের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায় এক তৃতীয়াংশ গণপরিবহনের ফিটনেস নাই।’

‘প্রাইভেট কার ১৫ লাখের উপর হলেও দ্বিতীয় গাড়ি আছে এমন সংখ্যা কিন্তু এক লাখের কম। তাই দ্বিতীয় গাড়ির ওপর করারোপ করা হলেও সেটির অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি না। তবে পলিসি লেভেলে এটির গুরুত্ব অনেক। এটি সেই বার্তা দেয় যে সমাজে যারা বেশি সুবিধা ভোগ করছে ও কার্বন নিঃসরণ করছে, তাদেরকে পরিবেশ দূষণ ট্যাক্স বহন করতে হবে। আর এখান থেকে আসা ট্যাক্সের টাকা যেন গণপরিবহনের উন্নয়নে ব্যয় করা হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

গণ পরিবহণ বিশেষ করে বাসের কন্ডিশনের জন্য অনেক বেশি বায়ু দূষণ হয়। এক্ষেত্রে বাসমালিকরা যেন লক্কড়-ঝক্কড় বাস রাস্তায় না নামায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

গাড়ির ইঞ্জিন যত পুরনো হয়, সেটি তত বেশি দূষণ করে। এই দূষণ কমাতে সড়ক থেকে পুরনো গাড়ি দূর করা বেশি জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। এক্ষেত্রে তার পরামর্শ- পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ির ট্যাক্স ২৫ হাজার টাকা হলে, ছয় বছরের পুরনো হলে এটি আরও বাড়াতে হবে। এভাবে গাড়ি যত পুরনো হবে তার ট্যাক্সের মাত্রা তত বাড়ালে এই নীতি কার্যকর হবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/ এনইউ

কার্বন কর জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর