Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বরাদ্দ বেড়েছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৩ ০৯:২৫

ঢাকা: দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পরিবেশ ও মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এছাড়াও আগামী অর্থবছরে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দের পরিমাণ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার ৫২ কোটি টাকা। জলবায়ু সংশ্লিষ্ট ২৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে এই বরাদ্দ বাস্তবায়ন করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট বক্তৃতায় এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির গতিধারা বজায় রাখার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও প্রশমনের বিষয়ে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিত অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণ করে সম্প্রতি ২০২৩-২০৫০ মেয়াদের জন্য ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান (নেপ) প্রণয়ন করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে সৃষ্ট বিপন্নতা ও ঝুঁকি নিরসনের মাধ্যমে একটি জলবায়ু অভিঘাত সহিষ্ণু সমাজ গঠন করা।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুরক্ষার জন্য ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কৌশলগত বিনিয়োগ কাঠামো বাংলাদেশের উন্নয়ন পথযাত্রাকে জলবায়ু বিপদাপন্নতা থেকে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক উৎস থেকে অর্থায়নের পথ সুগম করবে।

অর্থায়নের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উৎস থেকে জলবায়ু অর্থায়ন প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমরা আমাদের সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু পরিবর্তনকেন্দ্রিক ব্যয় সংশ্লিষ্টতা ও ব্যয় বরাদ্দের আবশ্যকতা যাচাই করছি। এছাড়া, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তথ্যাদি অন্তর্ভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। ফলে, তথ্য-ভিত্তিক নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সহজ হচ্ছে।

বাজেট বক্তব্যে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে বলা হয়, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭’ যুগোপযোগী ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া, প্রণয়ন করা হয়েছে বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২।

এছাড়া ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় ও শিল্পঘন শহরে ১৬টি সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্র (সিএএমএস) ও ১৫টি কম্প্যাক্ট বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্রের (সি-সিএএমএস) মাধ্যমে বায়ুমান পরিবীক্ষণ এবং দৈনিক ভিত্তিতে বায়ুমান সূচক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে।

এতে বলা হয়, শিল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইটিপি প্রয়োজন হয় এমন ২ হাজার ৮৯৪টি তরল বর্জ্যা নির্গমনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৩৮২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে তরলবর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করা হয়েছে। অর্জিত ইটিপি কভারেজ ৮২ দশমিক ৩১ শতাংশ। পরিবেশ সুরক্ষায় বনায়ন প্রক্রিয়ার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদ এর সদস্যভুক্ত দেশ। তাই কুনমিং-মনট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক এর অনুসরণে ‘ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি স্ট্র্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান’ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, দায়বদ্ধতা এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের উদ্ভাসিত আলোয় ২০৪১ সালের মাঝে সম্পূর্ণ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার অন্তর-মন-প্রোথিত ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামমলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।

আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

সারাবাংলা/এসবি/ এনইউ

জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর