Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাজেট প্রণয়ণে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের সম্পৃক্ততা ছিল না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ জুন ২০২৩ ১৭:৩০

ঢাকা: দেশে নির্বাচনী ডামাডোল বাজলেও এবারের বাজেট নির্বাচনী বাজেট হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ণে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বাজেটে জনতুষ্টি অর্জনের মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন এ এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২০২৪: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষগুলো কি পেল?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময় আরও বক্তব্য দেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

গাম্ভীর্য হারিয়ে বাজেট এখন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেটে আগে যে গাম্ভীর্য ছিল, এখন অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর অংশ হয়ে গেছে। বাজেটের ভেতর দিয়ে গত ১৫ বছরে সরকারের যে অর্জনগুলো ছিল, ওই শত শত পৃষ্ঠার ভেতর দিয়ে মনে দাগ কাটেনি।’

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট প্রণয়নে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। রাজস্ব আহরণের মরিয়া চেষ্টার ফলে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে এগুলোকে রাজনৈতিক বিবেচনায় মূল্যায়ণ করা হয়েছে বলেও মনে হয় না। এটা যে নির্বাচনী বাজেট না তা লক্ষ্যণীয়। ওই পদক্ষেপগুলো একটি রাজনৈতিক সরকারের বিবেচনায় কতটুকু গ্রহণযোগ্য- তাতে আমার সন্দেহ আছে। এই বাজেট আমলাতান্ত্রিকভাবে রাজস্ব আহরণের প্রয়োজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকারের হাতে খরচ করার মতো টাকাও নেই, ডলারও নেই, তাই খরচ করার টাকা সে সংগ্রহ করতে চাচ্ছে। মরিয়া চেষ্টাটা হয়েছে কারণ আইএমএফ বলেছে প্রতিবছর শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। সেটারও একটি বিষয় রয়েছে। আইএমএফর প্রথম সমীক্ষা হয়েছে। দ্বিতীয় সমীক্ষা বছরের শেষের দিকে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এতো চেষ্টার পরও আধা শতাংশ বর্ধিত করের লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু বাজেটে প্রাক্কলন করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এটা যে নির্বাচনী বাজেট না তা স্পষ্ট বোঝা যায়। ওই পদক্ষেপগুলো একটি রাজনৈতিক সরকারের বিবেচনায় কতোখানি গ্রহণযোগ্য এটা আমার সন্দেহ আছে। এটা খুবই আমলাতান্ত্রিকভাবে রাজস্ব আহরণের প্রয়োজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়েছে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেগুলো নেওয়া হয়েছে তার অনেকগুলো পদক্ষেপ, দুই হাজার টাকা (টিনধারীদের ন্যূনতম কর) তো বটেই, সারচার্জ- এছাড়া অন্যান্য যেগুলো আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত, অনেক সময় দরিদ্র মানুষকে প্রভাবিত করবে নেতিবাচকভাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে রকম, অর্থনৈতিক পরস্থিতি যে রকম, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেটি নির্ধারণ করতে হচ্ছে, এতদিনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য, তা বর্তমানের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটিও বাস্তবসম্মত না। এটি সকলেই জানে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব আদায়ের মরিয়া চেষ্টা, এটা কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে, আইএমএফ’র শর্ত পূরণ করার জন্য, কিন্তু এখানে কোনো রাজনৈতিক ধোলাই হয়নি। রাজনৈতিক ধোলাই যদি হতো, সংসদ সদস্য ও স্থায়ী কমিটিগুলোর কাছে নিয়ে যেতেন, এগুলোর অনেকগুলোতেই উনারা রাজি হতেন না। তার প্রকাশ কিন্তু এখন সংসদ আলোচনায় ক্রমান্বয়ে বেড়বে। বিদ্যুতের আলোচনা, আমদানি নিয়ন্ত্রণের আলোচনা- এগুলো সবই আগামীতে আসবে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বহু আগে একজন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, প্রত্যেক বাজেটই তো নির্বাচনী বাজেট। আমি গত ৫ বছর ধরেই তো নির্বাচনী বাজেট দিয়ে যাচ্ছি। এটি একটি রাজনৈতিক উত্তর হতে পারে। নির্বাচনী বাজেটের ভেতর কী থাকে? খরচযোগ্য তদারকিহীন টাকা (লোস মানি) থাকে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন যায়গায় লুকায়িত যে অর্থ রয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তার চেয়ে বেশি। আপনি যদি জনতুষ্টি চান তাহলে তো সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দেবেন। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড যেটি দেড় বছর ধরে শুনছি, এখনও জানি না কয়টি কার্ড দিয়েছে, কোন ফ্যামিলি পেল?’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যদি থাকতো তাহলে জনপ্রতিনিধিরা বলতো ওখানে টাকা দাও। ওখানে খাদ্য সাহায্য দাও, শহরের ভেতরে ওএমএসের পরিমাণ আরও বাড়াও, ট্রাকের সংখ্যা বাড়াও, জেলা পর্যায়ে ওএমএস নিয়ে যাও। এই রিটার্ন সনদ পেতে দুই হাজার টাকা, এটা কেউ দেয়? কতো টাকা এটা থেকে আদায় হবে? কেউ বলছে এক হাজার কোটি টাকা আদায় হতে পারে।

কার্যত এটি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আদায় হতে পারে। এই ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার জন্য এই সামাজিক সমালোচনা কেউ সহ্য করে। এটি কোনো রাজনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত হতে পারে? এই বাজেট প্রনয়ণের ক্ষেত্রে আমাদের জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকরা কতটুকু যুক্ত ছিল? আর্গে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হতো, সর্বশেষ মুহিত সাহেব (প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের ডেকে একটি বৈঠক করতেন, এবার সেটাও হয়েছে কিনা আমরা জানি না। এই যে পদক্ষেপগুলো এগুলো নিয়ে তো রাজনৈতিক দলের ভেতরে আলোচনাই হলো না।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ

টপ নিউজ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর