আমদানির পরও দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি
১৩ জুন ২০২৩ ১৮:৩৯
ঢাকা: কিছুতেই কমছে না পেঁয়াজের দাম। প্রতিদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আসলেও দেশি পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকায় চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে বলেন জানান খুচরা বিক্রেতারা।
তবে পাইকারি বিক্রিতারা বলেছেন, কৃষকরা মুজত করে রাখায় দেশি পেঁয়াজের দাম কমছে না। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেছেন, পেঁয়াজের বাজারের সিন্ডিকেট এখনো ভাঙেনি। ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে পেঁয়াজ থেকে বাড়তি মুনাফা সংগ্রহ করে নেওয়ার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে পেঁয়াজের দাম তারা নিচে নামতে দিচ্ছেন না।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী বউবাজার, বিজয় সরণির কলমিলতা বাজার ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বেশি কিছু বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রায় সব বাজারেই দেশি পেঁয়াজ অভিন্ন দামে, অর্থাৎ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রায় সব বাজারেই ৬০ টাকা কেজি।
রাজধানীর মহাখালী বউ বাজারের দোকানি শাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতেই ৭৩ টাকা কেজি কেনা লাগছে। কেজিতে ২ টাকা করে খরচ আছে। তাই আমরা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি, কমেছে কেবল টিভিতে। খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশি ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কমলো কোথায়?’
একই বাজারের ভাই ভাই স্টোরের মালিক আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ সকালে কাওরান বাজার থেকে দেশি পেঁয়াজ ৭৬ টাকা করে কিনেছি। পাইকারিতে ৭৬ টাকা হওয়ায় খুচরায় ৮০ টাকা বিক্রি করছি। ভারতীয় পেঁয়াজ কিনেছি ৫০ টাকা কেজিতে, বিক্রি করছি ৬০ টাকায়।’
এদিকে বিজয় সরণির কলমিলতা বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। বাজারটিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারের একটি দোকানদার শাহাদাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ ৭৪ টাকা কেজিতে কিনেছি। বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাাঁচাবাজারেও অভিন্ন চিত্র। বাজারটির মামা-ভাগিনা জেনারেল স্টোরের কর্মচারী রহমান বলেন, ‘আমরা ১০ তারিখ ৭১ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ এনেছি। এরচেয়ে কমে কিনতে পারিনি। ৮০ টাকা করে বিক্রি করছি। এই বাজারের আল আমিন জেনারেল স্টোরের মালিক মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকেও শ্যামবাজার থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। বিক্রি করছি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।’
রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারিতে ৭২ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। এই বাজারের একজন আড়তদার আশরাফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারিতে ৭৬ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামেই বিক্রি করছি। পাবনা থেকে পেঁয়াজ কিনে আনি। সেখানেই দাম বেশি।’
এই বাজারের আরেক আড়তদার মের্সাস মাতৃভাণ্ডারের মালিক কালাম শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। এক বস্তা পেঁয়াজ নিলে এমন দাম রাখা হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করায় পেঁয়াজের দাম বাড়তি। দেশি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে নেমে ছিল।’
এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে।
প্রসঙ্গত, দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ৫ জুন থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। আমদানি শুরুর পর দেশে এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতেও নেমে আসে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। তবে ‘রহস্যজনক’ কারণে ফের পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস