‘জেন্ডার বাজেট নারীর জন্য থোক বরাদ্দ নয়’
১৫ জুন ২০২৩ ০০:১৩
ঢাকা: জেন্ডার বাজেট নারীর জন্য কোনো থোক বরাদ্দ নয়। নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে বরাদ্দকৃত বাজেট কীভাবে ভূমিকা রাখবে সেটাই জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৪টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত জেন্ডার বাজেটে ১৬টি ইন্ডিকেটর যুক্ত করা হলেও জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে সংখ্যার ভেতরে ঢুকে কাজ করতে হবে। এবং বাজেটকে জেন্ডার সংবেদনশীল করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রকে পরিবর্তন করতে হবে।
বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত জাতীয় বাজেটের জেন্ডার সংবেদনশীলতাবিষয়ক প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, জেন্ডারভিত্তিক আলোচনার ক্ষেত্রে উপস্থাপিত সংখ্যার ভেতরে যাওয়া ও কাজ করার দরকার আছে। সার্বিক জেন্ডারভিত্তিক রীতিনীতির পরিবর্তনে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে, কারিকুলাম জেন্ডার বান্ধব করতে হবে। নারীর শিক্ষা ও সম্পদ-সম্পত্তিতে অধিকার থাকতে হবে। এ সময় বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঘোষিত জাতীয় বাজেটে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণ করে সংগঠনের প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তির সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
স্বাগত বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘জেন্ডার বাজেট সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে যার ফলে এখন ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন পেয়েছি। নারী পুরুষের বৈষম্য চিহ্নিত করে বরাদ্দকৃত বাজেট কীভাবে তা দূর করবে, আজকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে কীভাবে নারীকে কীভাবে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে, প্রচলিত বৈষম্যমূলক রীতিনীতি দূর করতে কী ভূমিকা রাখছে এই সকল প্রেক্ষিতকে বিবেচনায় রেখে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট বাস্তবায়ন ও মনিটরিং মেকানিজম তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।’
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘জেন্ডার বাজেটে নিয়ে আরও কাজ করার আছে। বাজেট বিশ্লেষণে যে ১৬টি ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয় তার বিচার বিশ্লেষণে জেন্ডার লেন্স কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখার আছে। জেন্ডার বাজেট বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সঠিক জেন্ডার লেন্স ও জেন্ডার সংবেদনশীলতার ইন্ডিকেটরগুলো ব্যবহার করতে হবে।
মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূরের জন্য দরকার শক্তিশালী নারী আন্দোলন। নারী আন্দোলনের কারণে জেন্ডার বাজেট এসেছে। কিন্তু সামাজিক রীতিনীতি এখনো জেন্ডার বান্ধব না। তাই জেন্ডার বাজেট হলেও তা নারীর ক্ষমতায়নকে তরান্বিত করতে পারছে না। জেন্ডার বাজেটের আলোকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মানুষের জীবনমানের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। বাজেটের মানদণ্ডে কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে, ঝরেপড়া রোধের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে জেন্ডার সম্পৃক্ত ৪৪টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের পরিচালন বাজেট ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৩ হাজার কোটি টাকা। জেন্ডার সম্পৃক্ত বাজেট বরাদ্দ ৭৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম