ছেলেসহ গৃহবধূ খুনের দায়ে স্বামী-সতীনের কারাদণ্ড
২২ জুন ২০২৩ ২২:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছয় মাস বয়সী ছেলেকে খুনের মামলায় এক ব্যক্তি ও তার প্রথম স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে আদালত তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বেগম সিরাজুম মুনীরা এ রায় দেন বলে অতিরিক্ত মহানগর পিপি দীর্ঘতম বড়ুয়া জানিয়েছেন।
রায়ে দণ্ডিতরা হলেন- আব্দুল বারেক ও ফাতেমা বেগম লাকী। তাদের বাসা ছিল নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায়।
মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, পেশায় বাসচালক আব্দুল বারেকের দুই স্ত্রী। ফাতেমা বেগম লাকী ও রহিমা বেগম সুমি। ঘটনার সময় লাকীর ঘরে দেড় বছরের এক মেয়ে এবং সুমির ছয় মাস বয়সী হৃদয় নামে এক ছেলে ছিল। লাকী ও তার মেয়ে আলাদা বাসায় থাকতেন। কাছাকাছি আরেক বাসায় বারেক তার দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তান ও ভাইবোনদের নিয়ে থাকতেন। পেশায় পোশাককর্মী লাকী মেয়েকে সুমির কাছে রেখে প্রতিদিন সকালে কর্মস্থলে যেতেন। সন্ধ্যায় ফিরে মেয়েকে আবার নিজের কাছে নিয়ে যেতেন। বারেকের সঙ্গে সুমির পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য চলছিল। এর জেরে লাকী ও বারেক মিলে সুমিকে খুনের পরিকল্পনা করেন।
২০১১ সালের ২৬ মার্চ রাতে লাকীর উপস্থিতিতে বারেক নিজ বাসায় সুমিকে মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর দু’জন মিলে তার লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। সুমির ছেলে হৃদয়কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মেঝেতে ফেলে রাখে বারেক। পরে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে বারেক ও লাকী পেছনের গ্যাসলাইনের জন্য রাখা ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। বাসার অন্য কক্ষে বারেকের ছোট বোন মরিয়ম ছিল।
এরপর দু’জন ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ভোরে লাকী বাসায় স্বামী বারেককে খুঁজতে আসার নামে দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। পরে মোবাইলে ফোন করে ভেতর থেকে দরজা না খোলার বিষয়টি বারেককে জানায়। বারেক এসে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকেন। তখন স্থানীয়রা ঝুলন্ত অবস্থায় সুমির লাশ ও মেঝেতে মৃত অবস্থায় ছেলেকে দেখতে পান। বারেক তাদের জানান, ছেলেকে খুন করে সুমি আত্মহত্যা করেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় সন্দেহ হওয়ায় বারেক, লাকী ও মরিয়মকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সুমির বোন জহুরা বেগম বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত মহানগর পিপি দীর্ঘতম বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, মামলা তদন্ত করে পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইসমাইল ২০১২ সালের ৩১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে বারেক ও লাকীকে আসামি করা হয়। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালত এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় হাজতে থাকা বারেক ও লাকীকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পরে তাদের সাজামূলে কারাগারে পাঠানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম