‘হামিদ কারজাই মার্কা সরকার আসবে কি না ফয়সালা হবে নির্বাচনে’
২৫ জুন ২০২৩ ০০:০২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগামী নির্বাচন হচ্ছে দেশের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। দেশ পাকিস্তান হবে, নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার অভিযাত্রায় আরও দ্রুত বেগে এগিয়ে চলবে- এর ফয়সালা হবে নির্বাচনে। এই দেশে কোন তাবেদার সরকার বসবে, যারা দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেবে তারা বসবে, নাকি শেখ হাসিনার মতো স্বাধীনচেতা নেতার নেতৃত্বে সরকার থাকবে- তার ফয়সালা হবে নির্বাচনে।
শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন সমাগত, এই নির্বাচন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফয়সালা হবে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে নাকি সমুদ্রের একটা অংশ কেউ নিয়ে যাবে। আমাদের কোনো দ্বীপ অন্য কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না তার ফয়সালা হবে। দেশে হামিদ কারজাই মার্কা তাবেদার সরকার আসবে কি না তার ফয়সালা হবে।’
‘সুতরাং আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। দল সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায়। সাড়ে ১৪ বছর আগের চিত্র আর আজকের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরুন। শুধু নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে দেবে, সেই কর্মী আমাদের প্রয়োজন নেই। যেসব কর্মী উদ্ধত আচরণ করে তারা দলের জন্য বোঝা, তাদের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না।’
শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়ে অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘অ্যামিনেস্টি ইান্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলছে, যারা র্যাবে কাজ করবে কিংবা মানবাধিকার লংঘনের সাথে যুক্ত থাকবে তাদের যেন স্ক্রিনিং করা হয় এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীতে না নেওয়া হয়। আমরা এই অ্যামিনেস্টিকে চিনি, তারেক রহমানের বেয়াইন আইরিন খান অ্যামিনেস্টির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এখনো অ্যামিনেস্টির সাথে যুক্ত আছেন। তিনি তারেক রহমানের বউয়ের চাচাতো বোন।’
‘এই অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার শুরু হলো, তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দিয়েছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যখন বিএনপি-জামাত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছিল, তখন কোনো বিবৃতি দেয়নি। আরেকটা সংগঠন আছে- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ওনারাও মাঝে মধ্যে বিবৃতি দেয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এগুলোর বিবৃতি কীভাবে হয়, কোথায় ড্রাফট হয় আর কিসের বিনিময়ে আসে সেটা আমরা জানি। তারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য বিবৃতি দেয়, অথচ ফিলিস্তিনে পাখি শিকারের মতো মানুষ শিকার করা হয়, তখন ইসরাইলের বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয় না। সুতরাং আমাদের নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার নৈতিক কোনো অধিকারও তাদের নেই। আমাদের দেশের কিছু পত্রপত্রিকা আবার তাদের বিবৃতি বড় করে ছাপায়। এই বিবৃতির কোনো মূল্য নেই। বিভ্রান্ত হবার কোন দরকার নেই।’
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ‘অপশক্তি’ এক হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের পক্ষ থেকে দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। সেই লবিস্টের পেছনে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার খরচ করে কয়েকটা বিবৃতি আর কিছু কিছু কংগ্রেসম্যান কিংবা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মেম্বারের চিঠি কেনা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার ৭০৫ জন। এর মধ্যে মাত্র পাঁচজন বাংলাদেশের বিষয়ে চিঠি দিয়েছে, যার কোনো মূল্য নেই। এটা নিয়ে কী যে মাতামাতি, পত্রিকায় কত সংবাদ! পুলকিত মির্জা ফখরুল দেখি দুই ইঞ্চি লাফ দেয়।’
‘২০০২ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায়, তখন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সর্ব-সম্মতিক্রমে রেজুলেশন পাস করেছিল যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দমন-নিপীড়ন হচ্ছে। তখনও সাতশ’র বেশি পার্লামেন্ট মেম্বার ছিল। এখন ৭০৫ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন একটা চিঠি দিয়েছে। এগুলোতে ওনাদের কী লেগেছে জানি না, সম্ভবত কাতুকুতু লেগেছে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি মো. মঈনুদ্দীন, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদিক খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, নাজিম উদ্দিন মুহুরী, এসএম রাশেদুল ইসলাম, দিলোয়ারা ইউসুফ, সেলিম উদ্দিন এবং মাহাবুবুর রহমান রুহেল।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম