Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুইজ্যারল্যান্ড প্রবাসীর খামারে নানা জাতের ‘বিদেশি’ গরু

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুন ২০২৩ ২১:১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শাহীওয়াল, আমেরিকার ক্রস ব্রাহামা, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, থাইল্যান্ডের ইন্দো-ব্রাজিল আর ভারতের সিব্বি- বিদেশি নানা জাতের গরুর সমাহার চট্টগ্রামের ‘আছিয়া এগ্রো ফার্মে’। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের এসব গরু এখন চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকার মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উচ্চ মধ্যবিত্ত, ধনাঢ্য লোকজন ছুটছেন এই খামারে। বাজারে নেওয়ার আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে গরুগুলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবের কল্যাণে ব্যাপক প্রচার আছিয়া এগ্রো ফার্মের। বাস্তব চিত্রটা কী- জানতে শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে নগরীর চাঁন্দগাও থানার সানোয়ারা আবাসিক এলাকার চাঁন্দারপাড়ায় গিয়ে কথা হয় ফার্মের মালিক মো. মহসীনের সঙ্গে। তার ভাষায়, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া গরুগুলোকে সন্তানের আদরে বড় করা হয়েছে।

নগরীর চান্দগাঁওয়ের বাসিন্দা মহসিন ৩৪ বছর ধরে থাকেন সুইজারল্যান্ডে। শখের বশে সাত বছর আগে হাতেগোনা কয়েক গরু নিয়ে দেশে নিজের কেনা ছোট্ট জায়গায় শুরু করেন ‘আছিয়া এগ্রো ফার্ম’। দেখতে দেখতে সেই খামারের বিস্তৃতি এখন প্রায় তিন বিঘা। প্রতিবছর শুধুমাত্র কোরবানি ঈদের একমাস আগে তিনি দেশে আসেন। ঈদ শেষে আবার পাড়ি জমান সুইজ্যারল্যান্ডে।

মূল শহর থেকে বহদ্দারহাট হয়ে কালুরঘাট সেতুর দিকে যাবার পথে চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড়ে মূল সড়ক থেকে দক্ষিণ-পূর্বে যেতে হয় প্রায় ১৫ মিনিট। সরু একটি রাস্তা দিয়ে চাঁন্দারপাড়া পৌঁছালেই চোখে পড়ে গাছ-গাছালি ও পাকা ইটের দেয়াল দিয়ে দিয়ে ঘেরা খামারটি। শহরের ভেতর যেন এক টুকরো গ্রাম ! খামারের মাছে সবুজ ঘাসের মাঠ। সেখানে চরে বেড়ায় গরুগুলো।

খামারে ঢোকার পর প্রথমেই দেখা মিলল সারি সারি ক্রস ব্রাহামা জাতের গরু। হালকা ধূসর, সাদা, লাল-বিভিন্ন রঙের ব্রাহামা। এর পাশেই আলাদা শেডে বেঁধে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি শাহীওয়াল গরু। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ১টি ও ২টি ইন্দো-ব্রাজিল গরু আছে। সিব্বি জাতের গরুও আছে কয়েকটি। শেড থেকে শেডে ঘুরে ঘুরে চার থেকে পাঁচ বয়সী ব্রাহামার বাচ্চাগুলো খেলছিল।

মহসিন সারাবাংলাকে জানালেন, খামারে এবছর কোরাবনির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৮০টি গরু। ৩০টি গরু ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অবস্থা এমন, বাকি গরুগুলো নিয়ে চলছে অনেকটা কাড়াকাড়ি ! টেলিফোনে, ফেসবুকেও বুকিংয়ের তোড়জোড় অনেকের।

খামারে প্রায় সবই বড় বড় গরু দেখা গেছে। ৪০০ কেজি থেকে শুরু করে কোনো কোনো গরুর ওজন ৯০০ কেজি পর্যন্ত, যেগুলোর দাম আড়াই থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত।

ক্রস ফ্রিজিয়ান গরুটির বয়স প্রায়ই দুই বছর, এর মধ্যেই ওজন ৯০০ কেজি ছাড়িয়েছে। দাম হাঁকছে সাত লাখ টাকা। সিব্বি জাতের ৭৮০ কেজি ওজনের ‘বুলেটের’ দাম হাঁকা হয়েছে ছয় লাখ টাকা। ‘বাবু’ নামের ৬০০ কেজি ওজনের একটি ক্রস ব্রাহামার দাম হাঁকা হয়েছে চার লাখ টাকা, যা বিক্রি হয়ে গেছে এরই মধ্যে।

তিনি বলেন, ‘৩৪ বছর আগে বিদেশে গিয়েছি। শখের বসে সাত বছর আগে নিজের টাকায় কেনা ছোট্ট একটি জায়গায় মাত্র কয়েকটি গরু নিয়ে খামার শুরু করি। গরু বাড়তে বাড়তে এখন জমিও বাড়াতে হয়েছে। এখন এই খামারে ৮০টি গরু আছে। সব বড় বড় গরু। এর মধ্যে ৩০টি বিক্রি হয়েছে।’

‘পাবনা, রাজশাহীতেও আমার গরুর খামার আছে। পাবনার খামারটি যৌথ মালিকানার। আমিসহ তিনজনের শেয়ার আছে। ওই খামারে এক হাজার গরু ছিল। ৫০০টি বিক্রি হয়ে গেছে। আর রাজশাহীরটা আমার নিজের। ওখানে ৫০টি গরু আছে।’

মহসিন জানালেন, তার খামারে লালনপালন করা প্রতিটি গরুকে দৈনিক ২৭ ধরনের দানাদার খাবার ক্রাশিং করে খাওয়ানো হয়। নিজেদের চাষ করা কাঁচাঘাস, ভুট্টার সাইলেজ ও শুকনা ঘাস খাওয়ানো হয়। স্ট্রয়েড কোনো খাবার খাওয়ানো হয় না।

গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাত বছর আগে কেজি প্রতি খাদ্য কিনেছিলাম ২০-২৫ টাকায়। গতবছর কিনতে খরচ হয়েছে ৩০-৩২ টাকা। আর এখন সেখানে খরচ করতে হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। সবমিলিয়ে একটি গরুর পেছনে এক হাজার করে গড়ে খরচ হচ্ছে। তবুও আমাদের ফার্মে আমরা গরুর দাম অনেক কমই রাখছি। লাইভ ওয়েটে ৬০০ কেজি ওজনের গরু সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা রাখা হচ্ছে। বাজারের তুলনায় তো অনেক কম।’

খামার নিয়ে পরিকল্পনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনের কোরবানি ঈদে ৩০০ গরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফার্মের পেছনে ও মাঝখানে যেসব খালি জায়গা আছে সেখানেও শেড করে গরু রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

ছবি : শ্যামল নন্দী, ফটো করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা

সারাবাংলা/আইসি/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর