‘মূল বেতনের ৫% বিশেষ প্রণোদনা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা’
২৫ জুন ২০২৩ ২২:৫১
ঢাকা: সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে দেব। সরকারি কর্মচারী যারা আছেন তাদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ এই আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
রোববার (২৫ জুন) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদর বাজেট অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন চলছিল।
দেশকে উন্নত করতে হলে আওয়ামী লীগকেই দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অনেকরকম কথা শুনি। আজকেই সরকার ফেলে দেবে। কালকে এটা করবে, ওটা করবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেলাম, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে এটা বাস্তবায়ন করবে কে? আমাকে একটা লোক দেখান যে, সে করতে পারবে। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে- এমন একটি মানুষ দেখান। সেরকম কোনো নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নাই।’
বাজেট বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড-পরবর্তী চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২ সালের আগস্টে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে এই চাপ সামলাতে গিয়ে এটি হ্রাস পেতে শুরু করে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের ক্রমহ্রাসমান হার বেড়ে যায়।’ বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ যথেষ্ট বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংসদ নেতা বলেন, ‘কঠিন সময়ের মধ্যে এবারের বাজেট দেওয়া হয়েছে। সারাবিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। যার আঘাত বাংলাদেশেও লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে অনেক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমরা বাজেট দিতে পেরেছি, সেটাই সব থেকে বড় কথা। জনগণ ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এ বাজেট দিতে পারছি। এ বাজেটটি আমাদের মেয়াদের ১৫তম। চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। কারণ, নির্বাচন এ বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।’
বিদ্যমান কাস্টমস আইনকে আরও বেশি যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। বাজেট নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন, নানা ধরনের কথা বলেছেন। অনেকে সংস্কারের কথা বলেছেন। আলোচনা-সমালোচনা যাই করুক না কেন বাজেট নিয়ে যে তারা চিন্তা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছরের বাজেট নিয়ে যারা মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জনগণের উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেই আমরা বাজেট দিয়েছি। আমদের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশকে স্বাবলম্বী করা। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পরমুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে, দেশ হিসেবে থাকতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘এত বাধা, এত প্রতিরোধ, এত সমালোচনা। এতকিছু হচ্ছে, কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ এতদিনে অনেক দূর, অনেক উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে পারত। তবে আমি বলব, এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময় সময় সমস্যাতো আসেই। এটা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না, এটা মোকাবিলা করতে হবে।’
জাতির সামনে আওয়ামী লীগের কেউ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। সেবা করতে পেরেছি বলে আজ আমরা দেশটাকে এই উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে পেরেছি। দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। আজ বেকারত্বের সংখ্যা মাত্র তিন ভাগ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিদ্যুতের একটা সমস্যা ছিল। রাশিয়া-ইউত্রেন ও স্যাংশনের কারণে সারা বিশ্বব্যাপী প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এমনকি কয়লা, এলএনজি বা তেল পাওয়াও যাচ্ছিল না। যাই-হোক সেটা থেকে আমরা মুক্ত হচ্ছি। সবাইকে এটাই বলব, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ সেটা তো সবাইকে দিতে হবে। আমরা আর ভর্তুকি দেব না। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হবেন।’
রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করব, সেই কাজই শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো স্মার্ট সিটিজেট, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গর্ভমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি। আমরা পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না, আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, আত্মমর্যাদাশীল হতে চাই। এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাদের মোট ঋণ আন্তর্জাতিক টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনার মাপকাঠির বেশ নিচেই রয়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরাময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি বাঙালি মাথা উঁচু করেই চলবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম