বৃষ্টিতে স্বস্তি, শূন্যে নেমেছে লোডশেডিং
২৮ জুন ২০২৩ ১৯:০৭
ঢাকা: একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে অফিস-আদালত বন্ধ, যে কারণে কমেছে বিদ্যুতের চাহিদা। চাহিদা কম থাকলে ভোক্তাদের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গত দুই দিন ধরে যে চাহিদা ছিলো তার পুরোটাই সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে রাত পোহালেই পবিত্র ঈদ উল আযহা। ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন সকলে। এই সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ঈদে যোগ করবে বাড়তি আনন্দ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বুধবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ১২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। দিনের বেলা এই চাহিদা ছিল ৮২০০ মেগাওয়াট। এর আগের দিন ২৭ জুন দিনের চাহিদা ছিল ৯৫৩০ মেগাওয়াট আর সন্ধ্যায় ছিল ১১৫৬৬ মেগাওয়াট।
জানা যায়, কয়েক সপ্তাহ আগেও ১৭ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি ছিল চাহিদা। ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, ১২ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৩ মেগাওয়াট। ফলে কার্যতই লোডশেডিং এখন শূন্যের কোঠায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত লোডশেডিং হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। পায়রাসহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলো উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
খাতা কলমে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সবশেষ ১৯ এপ্রিল করা হয় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৫১ লাখ।
মোট সঞ্চালন লাইন (সা.কি.মি.) ১৪ হাজার ৭১৭। গ্রিড সাব-ষ্টেশন ক্ষমতা (এমভিএ) ৬১ হাজার ৪৪৬,বিতরণ লাইন (কি.মি.): ৬ লাখ ২৯ হাজার। সিস্টেম লস ৭ দশমিক ৭৪% (জুন ২০২২)।
মাথাপিছু উৎপাদন (কিঃওঃআঃ): ৬০৯, বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ১০০%। এ ছাড়া প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৪৫ টি। আর সোলার হোম সিস্টেম ৬০ লাখ। বিদ্যুতের এত উদ্যোগের মধ্যে গত মে মাস পুরোটাই দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চরমভাবে ব্যাহত হয়। কয়লার অভাবে গত ২৫ মে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় লোডশেডিং। এ ছাড়া ডলার সংকটে জ্বালানির সংস্থান ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে যায়। ফলে লোডশেডিং আরও তীব্র আকার ধারণ করে। সে সময় নানা ধরনের বিকল্প পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বজায় রাখা হলেও লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমানো যাচ্ছিল না।
এরপর গত ২৫ জুন ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করলে লোডশেডিং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকে। এছাড়া ২৬ জুন ভারতের আদানি পাওয়ারের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসায় ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিডে যুক্ত হয়। তাছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও। শুষ্ক মৌসুমে কেন্দ্রটি ২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করলেও সম্প্রতি বৃষ্টির ফলে তা ৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি তাপমাত্রা কমে এসে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসায় বিদ্যুতের চাহিদাও কমেছে। আবার ঈদের কারনে অফিস আদালত ছুটি হয়ে গেছে। যে কারনে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে সমন্বয় করা গেছে।
এদিকে ঈদের ছুটিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীন ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিই তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও হঠাৎ কোথাও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে, ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে দ্রুত মেরামতের জন্য টিম তৈরি করে রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিপিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান সারাবাংলাকে বলেন, মূলত লোডশেডিংয়ের পরিমান তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে গেলে চাহিদা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, ফলে লোডশেডিং করতে হয়। তবে বর্তমানে পায়রা, আদানি উৎপাদনে আসায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তাপমাত্রাও অনেকটা কমে গেছে। আশা করছি পুরো ঈদের ছুটিতেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
উল্লেখ্য, দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার ৪৭ ভাগই গ্যাসভিত্তিক। বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা থেকে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকেও কিছু উৎপাদন হয়।
সারাবাংলা/জেআর/একে