রোগীর সেবাতেই ঈদ আনন্দ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের
২৯ জুন ২০২৩ ২৩:২৮
ঢাকা: ঈদ মানে স্বজনদের সঙ্গে কাটানো খুশির সময়। ঈদ মানে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দিয়ে বেড়ানোর সুযোগ। ঈদ মানেই আনন্দের উচ্ছাস। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকেই রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে ঈদ মানেই দায়িত্ব। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নয়, হাসপাতালে রোগীদের সেবাতেই কাটে ঈদের দিন ও রাত।
সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলাই তাদের কাছে ঈদের আনন্দ। আবেগকে হার মানিয়ে দায়িত্ববোধকে ভালোবেসে এই ঈদের আনন্দ রোগীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সারাদেশের মানুষ যখন ঈদ আনন্দে ব্যস্ত তখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। একের পর এক রোগী আসছে আর জরুরি বিভাগে তাদের সেবা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বরতরা।
এদিন সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে এই পরিস্থিতি দেখা যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নাজিরাবাজার থেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া ৫৭ বছর বয়সী বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে আসেন মাইনুল ইসলাম রাজীব। সকাল থেকে বুকে ব্যথা শুরু হওয়ায় এখানে নিয়ে আসেন বাবাকে। আসার পর টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের কাছে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে যান তিনি।
রাজীব সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আনন্দ কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল আব্বুর শরীর খারাপ হওয়াতে। কিন্তু এখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা স্বস্তি পেলাম ঈদের দিনেও চিকিৎসাসেবা পেয়ে।’
লালবাগ এলাকা থেকে ঢামেকে ১৭ বছর বয়সী আমিনুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য এসেছেন ঢামেকের জরুরি বিভাগে। ঈদুল আজহার পশু কোরবানির সময় হাতের আঙ্গুল কেটে যায় আমিনুলের। আর তার চিকিৎসায় ব্যস্ত চিকিৎসকরা।
আমিনুলের সঙ্গে আসা মোহাইমিনুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির সময় হাতের আঙুল কেটে ফেলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হলো। বিপদ তো আর বলে আসে না। এখানে আসার পরে ওর রক্তক্ষরণটা বন্ধ করা গেছে।’
দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের দিনটা আনন্দের হলেও এভাবে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করায় তাদের খুব বেশি আক্ষেপ নেই। কারণ মানুষের প্রয়োজনে তারা সবাইকে সেবা দিয়ে যেতে পারছেন এটাই তাদের বড় আনন্দ। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দের সময় কাটানোটা উপভোগ করতে না পারলেও পেশাগত দায়িত্ব থেকে সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে যেতে।
জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাই ঈদ করে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে। এটা হলো মানসিক একটা প্রশস্তির বিষয়। এর পাশাপাশি দায়িত্বেরও একটা বিষয় আছে। দায়িত্ব পালনে একটা আলাদা শান্তি আছে আবার এক ধরনের চাপও আছে। হাসপাতাল হলো এমন একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে মানুষ আসবে চিকিৎসা সেবা নিতে। তাই এখানে সেই দায়িত্ব পালনে পিছপা হওয়া যাবে না চিকিৎসকদের।’
সকাল থেকে প্রায় ১০০ জন রোগী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান ডা. আলাউদ্দিন।
কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতি অবশ্য ঢামেকের স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিভাগে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এখানে রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের হাসিখুশিতে ভরা মুখই বলে দিচ্ছিল সন্তুষ্টির বার্তা। আর তা হবেই বা না কেন?
এদিন সকাল থেকে এই বিভাগে স্বাভাবিক প্রসবে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক মা। একইসঙ্গে আরও একজন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসব করেছেন। এছাড়াও লেবার রুমে একাধিক মায়ের স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টায় ব্যস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এর পাশাপাশি একাধিক মায়ের অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে এই বিভাগেই৷
১২ জন চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিভাগের ইউনিট-৬ এর চিকিৎসক
ডা. নুরুন নাহার বলেন, আজ রোগী ভর্তির দায়িত্ব ছিল আমার। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে স্বামী ও সন্তান দেশের বাড়িতে গেছে। আর আমি রোগীদের সেবা দিয়েই ঈদ আনন্দ পালন করছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়: সকালে সবাই যখন ঈদগাহে ঈদ জামাতে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আসেন ডা. রেজাউল করিম কাজল। গুরুতর রোগী আসায় দ্রুত প্রস্তুত করা হয় অস্ত্রোপচার কক্ষ।
ঘণ্টাখানেকের অস্ত্রোপচার শেষে পৃথিবীর আলো দেখলো দুই জমজ শিশু। দুই চিকিৎসকের কোলে চড়ে মায়ের কাছে এলো তারা।
অস্ত্রোপচার শেষ করে একটু অবসর পেলেন ডা. কাজল। ঠিক এ সময়ই বড় ছেলের ভিডিও কল। ফোনের ওপাশ থেকে তাকে বলা হচ্ছে, ‘বাবা, ঈদ মোবারক। তুমি কি পায়েশ খেয়েছো?’
ডা. কাজল জবাব দেন, ঈদ মোবারক। এই দেখ, আমিও খাচ্ছি। এক রোগীর স্বজন এনেছে।
ডা. কাজলের মতো বিএসএমএমইউতে ঈদের দিনে কাজ করছেন কয়েকশ স্বাস্থ্যকর্মী। রোগীদের সেবা দেয়াই ঈদের আনন্দ তাদের।
অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, ‘এ সময়গুলোতে যে রোগীদের আমরা সেবা দিয়ে থাকি, তাদের সঙ্গে আলাদা একটা বন্ধন তৈরি হয় আমাদের। আমরা সবাই হাসপাতালে রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কিন্তু একসঙ্গে কাজ করছি।’
আরেক চিকিৎসক কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘খুলনা থেকে আমার বাবা মা ভাইকে নিয়ে এসেছি। আমার বাচ্চাকে বাবা মার কাছে রেখে এসেছি। এখানে এসেছি যাতে যারা গর্ভবতী, যাদের সন্তান পৃথিবীতে আসতে যাচ্ছে তাদের পাশে যেন আমি থাকতে পারি।’
প্রায় একই চিত্র ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগেও দেখা গেলো। বোঝার উপায় নেই যে আজ ঈদের দিন। একের পর এক রোগী আসছে। ব্যস্ততার শেষ নেই স্বাস্থ্যকর্মীদের। হাসিমুখে সেবা দিচ্ছেন সবাই।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল: বিকেল ৩টায় মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৭ বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন তাসনিম আক্তার।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত পরশু থেকে ছেলেটার জ্বর। আর হঠাৎ করে আজ সকালে সেটি আরও বেড়ে যায়। তাই জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছি৷ এখানে চিকিৎসকরা ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়ার পরে ছেলেটাকে ভর্তি করিয়েছি।’
এই হাসপাতালেই দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন। আর তাই ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি প্রয়োজন হলে এনএস১ পরীক্ষা করে ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের ওসেক সার্ভিসের আওতায় জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারও করা হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী থেকে সিরাজুল ইসলাম এসেছে ১২ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে। সতর্কতার অভাবে কোরবানির সময় হাতে কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তার ছেলের। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা তিনি সন্তুষ্ট।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ছে‘লের হাত থেকে রক্ত পড়ছিল আর আশেপাশের সবকিছু বন্ধ দেখতে পাই। তাই আর দেরি না করে এ হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আসার পরে ওর হাতের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে দ্রুততার সঙ্গেই।’
প্রতিষ্ঠানটিতে সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৫৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসার পরে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে ৫০ জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিকেল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সহকারি পরিচালককে হাসপাতালের দায়িত্ব তদারকি করতে দেখা যায়। তবে সন্ধ্যার কিছু সময় পরে এখানে রোগীদের সেবা কার্যক্রম তদারকি করতে আসেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে জরুরি বিভাগে রোগীর অনেক চাপ থাকে। এমনিতেই এদিন নানা রকমের কাটাছেঁড়া নিয়ে আসেন রোগীরা। তার উপর আমাদের হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। এসব মিলিয়েই বিভিন্ন টিম আমাদের এখানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের পেশার সঙ্গে কিন্তু মানবিক ও মানবতা দুইটা দিকই জড়িত। তাই হাসপাতালে যখন রোগী আসে তখন পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়ার চাইতে বেশি জরুরি হয়ে পড়ে মানবতার সেবা করা।’
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর): চাঁনরাত থেকেই এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিবছর ব্যস্ত সময় পাড় করতে হয় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের। মোটর বাইক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া রোগীদের অধিকাংশকেই আনা হয় এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঈদুল আজহার সময় এর সঙ্গে যুক্ত হয় কোরবানির সময় কেটে যাওয়া হাত বা অন্যান্য দুর্ঘটনার রোগীরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২১৯ জন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. ইসরাত শর্মী নিজেই উপস্থিত ছিলেন রোগীদের সেবা কার্যক্রম তদারকিতে।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে এমনিতেই আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থাকে একটা। আর তাই পরিবারের সঙ্গে আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থাকলেও কিছুটা ইনভলবমেন্ট কম থাকে। দেখা গেলো আমরা পরিবারের প্রয়োজনীয় সবকিছু যোগাড় করে দিয়ে আনন্দের সময়েও হাসপাতালে চলে আসছি দায়িত্ব পালনের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘দিন শেষে বাস্তবতা হলো আমরা চিকিৎসকরাও মানুষ। আমাদের পরিবার ও স্বজনরাও চায় আমাদের সঙ্গে ঈদ করতে। আমরাও চাই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে, সন্তানদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে। কারণ আমাদের দেশে ঈদ একটা উৎসব যেখানে জড়িত থাকে আবেগও।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেখা যায় একটা পরিবারের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় থাকে। কিন্তু ঈদে সবাই এক জায়গায় একত্রিত হয়। পারবারিক একটা মিলনমেলা হয় যেখান থেকে আমরা আসলে প্রায়সময় বঞ্চিত হই। এটাকে আমরা অনেক সময় দুর্ভাগ্য হিসেবেই মনে করি। কারণ দায়িত্বের কাছে আসলে আবেগকে হার মানাতেই হয়।’
আর তাই ঈদের দিনে হাসপাতালে রোগীদের জন্য আলাদাভাবে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার মাঝেও তৃপ্তি খুঁজে পাই আমরা—মন্তব্য করেন ডা. ইসরাত শর্মী।
সরেজমিনে রাত ১২টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রোগীরা। আর তাদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা।
এর আগে বুধবার (২৮ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালীর ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র।
এসব হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকরা জানান, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ না করতে পারার আক্ষেপ তো সবারই থাকে। কিন্তু সেই আক্ষেপের কারণে দায়িত্বে তো অবহেলা করা যাবে না। একজন রোগীর সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হয়। ঈদের ছুটি নেই বা ঘুরতে যেতে পারছি না সেগুলো নিয়ে আসলে এই আক্ষেপ করেও লাভ নেই। কারণ শুধু আমরাই না, অন্যান্য অনেক জরুরি সেবার মানুষরাও কিন্তু সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
তারা বলেন, ‘আমরা চিকিৎসক। তাই রোগীদের সেবা দেওয়াটাই আমাদের দায়িত্ব। এটিকেই আমরা ঈদের আনন্দ বলে ভেবে নিচ্ছি। হয়তোবা কোনো একসময় আমরাও ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারব।’
শুধুমাত্র জরুরি বিভাগেই নয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা দেওয়াতেও ব্যস্ত চিকিৎসকসহ অন্যরাও।
এসব হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারাও প্রায় একই রকমের কথাই বলেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারার বেদনা আছে কিছুটা। কিন্তু রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারাটাও কম আনন্দের না বলেই জানান তারা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবারের স্বজনদের দূরে রেখে সবাই ঈদ করছে রোগীদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। চিকিৎসক ও এই সেবায় জড়িত সবার জীবনটাই আসলে এমন। সবাই ঈদের আনন্দ তাদের স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারলেও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঈদের আনন্দ খোঁজেন রোগীদের সেবার মাধ্যমে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে